কাজী আফতাব হোসেন, নগরকান্দা
দেশজুড়ে পেঁয়াজ চাষে বিখ্যাত ফরিদপুরের নগরকান্দা -সালথা উপজেলা। এখানের মাটি উর্বর এবং পেঁয়াজ চাষের উপযোগী। এখানকার কৃষকদের প্রধান অর্থকরী মসলা জাতীয় ফসল এটি।
চাষীদের মাথায় হাত। বিগত ২ বছর পেঁয়াজের দাম ভালো থাকায় ব্যাপক লাভ করতে পারলেও এবার পেঁয়াজ চাষে লোকসান গুনতে হচ্ছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি চাহিদা। ফলে দাম কমে যাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন নগরকান্দা -সালথার পেঁয়াজ চাষিরা।
জানা যায়, দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ফরিদপুরের নগরকান্দা -সালথা অঞ্চলে। দেশের প্রায় ৫০ ভাগ চাহিদা পুরন হয় ফরিদপুরের উৎপাদিত পেঁয়াজে। এরমধ্যে আবার সিংহভাগ উৎপাদিত হয় নগরকান্দা -সালথা উপজেলায়।
নগরকান্দা -সালথা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নগরকান্দায় ৯ টি ইউনিয়নে ৭ হাজার ৩০০ শত হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল। পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর সালথায় ৮টি ইউনিয়নে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছিল। এ বছর সালথায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এ বছরে নগরকান্দায়-সালথায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, ফলনও ভালো হয়েছে। গত দুই বছর প্রত্যাশা চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় অনেক কৃষক ঋণ নিয়ে এবার পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। যেসব জমিতে গম, সরিষা উৎপাদন করা হতো সেসব জমিতেও লাভের আশায় এবার পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে বলে জানান এ অঞ্চলের পেয়াজ চাষীরা।
নগরকান্দা উপজেলার পুড়াপাড়া ইউনিয়নের দফা গ্রামের পেঁয়াজ চাষী সেকেন্দার আলী জানান, এ বছর হালি পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় চাষে খরচ বেশি হয়েছে। বাজার মূল্য ৫০ টাকা কেজির কম হলে পেঁয়াজ চাষে লোকসান গুনতে হবে। বল্লভদি গ্রামের পেঁয়াজ চাষী বিল্লাল মিয়া বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে।
সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের সোনাতনদী গ্রামের কৃষক মীর আবুল কাশেম বলেন, ‘এ বছর প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। এরমধ্যে ৫ বিঘা জমি ছিল লিজ নেওয়া জমি।’ নিজের জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করতে প্রতি বিঘায় তার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আর লিজ নেয়া জমিতে প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ আবাদে ব্যয় হয়েছে অধ’ লক্ষাধিক টাকা। এতে করে ১ কেজি পেঁয়াজের গড় উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ টাকা। গত বছর এক মন পেঁয়াজ ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা ধরে বিক্রি হয়েছে। বছরজুড়েই বাজার ছিল ভালো। গত বছরের তুলনায় এ বছর নতুন পেঁয়াজের দাম অর্ধেকেরও কম। এ কারণে এবার মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হতে পারে পেঁয়াজ চাষী আবুল কাশেমের।
নগরকান্দা সদর বাজারের পাইকারি হাটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আনিসুল ইসলাম ও মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, গত মঙ্গলবার হাটে নতুন পেঁয়াজ প্রতি মন ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শনিবার হাটে একমন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকায়। স্থানীয় পাইকারি বাজারে প্রতিদিন সরবরাহ বাড়ছে পেঁয়াজের। কিন্তু চাহিদা না বাড়ায় দাম পড়ে যাচ্ছে।
নগরকান্দা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তিলোক কুমার ঘোষ বলেন, দাম কমলেও কৃষকদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। এখন পুরোদমে পেঁয়াজ তোলা হচ্ছে। এজন্য বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। তাড়াহুড়ো করে পেঁয়াজ বিক্রি না করে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন তিনি। তার আসা, মৌসুম শেষে পেঁয়াজের দাম বাড়বে। সে সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখতে কৃষকদের পরামর্শ দেন তিনি।
Leave a Reply