ঢাকাসোমবার , ৩ নভেম্বর ২০২৫
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. টপ নিউজ
  7. ধর্ম
  8. ফিচার
  9. বিনোদন
  10. রাজনীতি
  11. লাইফস্টাইল
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সম্পাদকীয়
  15. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আসন্ন  নির্বাচনে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রস্তাবনা

Doinik Kumar
নভেম্বর ৩, ২০২৫ ১০:২১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মো. মাহবুবুর রহমান

বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো আসন্ন  জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ সতেরো বছর পর এমন এক নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যেখানে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়। বিশেষ করে দেশের তরুণ সমাজ—যারা এতদিন নানা কারণে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত ছিল—তারাও এবার নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে অংশ নিতে পারবে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা চড়াই–উতরাই পার হয়ে আমরা আজ এমন এক সময়ের মুখোমুখি, যেখানে দেশের গণতন্ত্র পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই এবারের নির্বাচনে শুধু দলীয় প্রতিযোগিতা নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষ, সৎ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের উত্থানই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা।
যোগ্য ও নীতিবান প্রার্থীর প্রয়োজন :
জাতীয় সংসদে যারা নির্বাচিত হবেন, তারাই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নির্ধারণ করবেন। সেই কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জনগণের প্রত্যাশা, তাঁরা যেন সৎ, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, নীতিবান ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেন। গত কয়েকটি সংসদে আমরা লক্ষ্য করেছি, রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ ও ত্যাগী নেতাদের পরিবর্তে ব্যবসায়ী শ্রেণি প্রাধান্য পেয়েছেন, যা জনগণের জন্য সুখকর ফল বয়ে আনেনি। তাঁরা মুখে বলেছেন মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, কিন্তু বাস্তবে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় ৩০০ আসনে  বিজয়ীদের  মধ্যে-
 ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ৩৮ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছিলেন।
 ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনের তথ্য নেই।
 ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৪৩ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছিলেন।
 ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনের তথ্য নেই।
 ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে ১৫৬ জন ব্যবসায়ী ছিলেন।
 ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে ১৮৬ জন ব্যবসায়ী ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৯৬ জন ব্যবসায়ী ছিলেন।
 ২০২৪ সালে  দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসলে বিজয়ীদের মধ্যে  ব্যবসায়ীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০০ জন।
উপরে উল্লিখিত তথ্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
অভিজ্ঞ ও সচেতন মহলের মতে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব  উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করে শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও সমাজবিজ্ঞানীসহ অন্যান্য পেশার প্রতিনিধির অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও নিশ্চিত করা গেলে জাতীয় সংসদ আরও কার্যকর, সমন্বিত ও বহুমাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
এভাবে সৎ, শিক্ষিত ও দেশপ্রেমিক প্রার্থী নির্বাচিত করলে আমরা আমলা ও পুলিশি নির্ভরতা থেকেও বেরিয়ে আসতে পারব এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নেতারাই দেশ পরিচালনা করবেন। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হবে সত্যিকারের জনগণের শাসনব্যবস্থা। তাঁরা কাজের জন্য দেশের জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকবেন, তাঁদের জবাবদিহিতাও সুনিশ্চিত হবে।
প্রার্থী বাছাই ও নৈতিক দিক : 
রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। হঠাৎ করে নির্বাচনের আগে মনোনয়নের আশায় যারা দলে যোগ দেন, তাঁদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। যেসব নেতার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে জমি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, কিংবা অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে এবং অতীতে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাঁদের যেকোনো অবস্থাতেই মনোনয়ন না দেওয়াই শ্রেয়। এতে দলের ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে, জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং দলীয় শৃঙ্খলায়ও দৃশ্যমান উন্নতি ঘটবে বলে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মনোনয়ন ও প্রেক্ষাপট:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে অবসরপ্রাপ্ত আমলা, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের মনোনয়ন দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা মূল্যবান হলেও রাজনীতির মাঠে অভিজ্ঞতা ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগও সমান জরুরি। সেই কারণে প্রয়োজন একটি আইনি বাধ্যবাধকতা, যাতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অন্তত চার থেকে পাঁচ বছর দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার পরই মনোনয়নের যোগ্য হন। চাকরিজীবনে প্রশাসনিক পদে থেকে অনেকেই ক্ষমতার সুযোগে এলাকার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন, যা স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। বিগত সরকারের শাসনামলে এরকম ঘটনা আমরা বিভিন্ন জায়গায় প্রত্যক্ষ করেছি। এ ধরনের প্রভাবশালী প্রবণতা রাজনীতিকে দূষিত করে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
শিল্পী ও ক্রীড়াবিদদের রাজনীতি : 
গত সরকারের আমলে শিল্পী ও ক্রীড়াবিদদেরও রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল। কেউ স্বেচ্ছায়, কেউবা চাপের মুখে রাজনীতিতে যুক্ত হন। এর ফলে অনেকের পেশাগত মর্যাদা ও সৃজনশীলতার ক্ষতি হয়েছে। আমরা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজাকে অনেকটাই হারিয়েছি। ফেরদৌসের মতো গুণী একজন শিল্পীকেও হারিয়েছি। এরা কোনো দলের নয়, এরা দেশের সম্পদ—সেদিকে সবার দৃষ্টি রাখা দেশের প্রয়োজনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা সেই বিপরীত প্রতিক্রিয়া সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনে দেখতে পাচ্ছি। রাজনীতি কোনো পেশা নয়—এটি একটি দায়বদ্ধতা, একটি সেবা। তাই যারা রাজনীতিতে আসবেন, তাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণ, খ্যাতি বা ক্ষমতা নয়।
নৈতিকতার রাজনীতি ফিরে আসুক :
আগের দিনের রাজনীতিবিদদের দিকে তাকালে দেখা যায়-তারা নিজস্ব সম্পদ ব্যয় করে জনগণের সেবা করতেন। কেউ ছিলেন আইনজীবী, কেউ শিক্ষক, কেউ সামাজিক নেতা। তাঁদের রাজনীতি ছিল ত্যাগ ও আদর্শনির্ভর। আজ সেই নৈতিক রাজনীতি অনেকটা বিরল হয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে সেই মূল্যবোধে ফিরে যাওয়ার। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে-ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা পরিষদ—আরও শক্তিশালী করা দরকার। স্থানীয় উন্নয়ন স্থানীয় সরকারগুলোর মাধ্যমেই করার ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। এমপি-মন্ত্রীদের অযাচিত হস্তক্ষেপও নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যকর ভূমিকা থাকলে জনগণের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপও কমবে। তাঁরা যেন উন্নয়ন কার্য পরিচালনা করতে গিয়ে দুর্নীতিপরায়ণ না হয়ে ওঠে, সে ব্যাপারে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।
দলীয় শৃঙ্খলা ও ন্যায্য প্রতিযোগিতা :
যারা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তাঁরা নির্বাচিত হওয়ার পর যেন কোনো দলীয় পদে থাকতে না পারেন-এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। পাশাপাশি, একই পরিবারের একাধিক সদস্যের প্রার্থী হওয়া বা পদ দখলের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। এটি দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও স্বজনপ্রীতি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, দলীয় নীতি ও আদর্শ, কার্যক্রম, বিভিন্ন সময়ে প্রণীত কর্মসূচি ও নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কে যাতে দলীয় নেতাকর্মীদের স্পষ্ট ধারণা থাকে—সে জন্য দলীয় উদ্যোগে মাঝে মাঝে প্রশিক্ষণমূলক কর্মশালার আয়োজন করা দরকার। এতে দলীয় কর্মীরা সুশৃঙ্খল ও আদর্শভিত্তিক রাজনীতির পথে অটল থাকতে পারবেন।
আগামী নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তরের আয়োজন নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনর্জাগরণের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। জনগণ চায় একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন, যেখানে প্রার্থী হবেন জনগণের প্রতিনিধি—কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর নয়। আমরা আশা করি, আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ, যেমন প্রার্থী, তেমন ভবিষ্যৎ। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই নির্ধারিত হবে—আমরা কি সত্যিই একটি ন্যায়ভিত্তিক, সুশাসিত ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে পারব, নাকি আবারও পুরনো ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত হব।
লেখক :
সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ
ফরিদপুর সিটি কলেজ, ফরিদপুর।
তথ্যসূত্র : সুজনের ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪ অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে
দিলীপ কুমার সরকার  উপস্থাপিত প্রবন্ধ থেকে প্রাপ্ত সংসদে  বিজয়ীদের সংখ্যা ।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।