নিজস্ব প্রতিবেদক, চরভদ্রাসন
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী চরহাজীগঞ্জ বাজারজুড়ে দ্রুতগতিতে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। বাজারের সরকারি খাস জমিতে রাতারাতি টং দোকান, পাকা দোকান এবং ফুটপাত ও যাত্রী ছাউনির আশপাশ দখল করে চালানো হচ্ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। শতবর্ষী বটগাছের পাকা চত্বর পর্যন্ত রেহাই পায়নি দখলদারদের হাত থেকে।
বাজারে প্রতি হাটবারে প্রধান সড়কের ওপর বসছে কাঁচাবাজার ও ফলের দোকান। এতে যান চলাচল তো দূরের কথা, সাধারণ পথচারীদের চলাফেরাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাজারের অবৈধ স্থাপনা সরাতে প্রায় ১৫ দিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে একাধিকবার মাইকিং করা হয়। এমনকি গত ২৮ জুলাই ইউএনও মনিরা খাতুন বাজার পরিদর্শন করে বিকেল ৪টার মধ্যে সকল অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্দেশনা উপেক্ষা করে দখলদাররা আগের অবস্থানেই বহাল রয়েছেন।
এ বিষয়ে ইউএনও মনিরা খাতুন বলেন, “বাজারটি পরিদর্শনের পর আমি দখলদারদের স্থাপনা সরাতে বলেছি। কিন্তু কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহের অজুহাত দেখিয়ে সরাননি। তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।”
চরহাজীগঞ্জ বাজার বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি কবিরুল আলম জানান, “বাজারের অবৈধ দখলদারদের পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। কিন্তু বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কেউ নিজ উদ্যোগে স্থাপনা সরাচ্ছেন না। ফলে এখন বাজারের কেন্দ্রস্থলে দাঁড়ানোরও জায়গা নেই।”
স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ বেপারী জানান, “বাজারের প্রাণকেন্দ্রে থাকা শতবর্ষী বটগাছ এলাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এখানে একসময় নাটক, খিয়েটা ও রাজনৈতিক সভা অনুষ্ঠিত হতো। দখলদাররা এই জায়গাটিও ব্যবসার জন্য দখল করে নিয়েছে।”
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রায় তিন শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ১০টি দোকান সরকারি বন্দোবস্তপ্রাপ্ত। বাকি সবই সরকারি খাস জমি দখল করে নির্মিত। অনেকেই একাধিক দোকান গড়ে অন্যদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন। বটচত্বর ও অন্যান্য সরকারি জমি দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন শেখ ফজল, শেখ আকতার, মুজিবর বেপারী, জহুরুল বেপারী, জিল্লুর রহমান, শেখ জাহিদ, দিগেন সরকার, চান মিয়া বিশ্বাস, ফরহাদ বেপারী, দাইমুদ্দিন শেখ, মজিবর বেপারী, শফি বেপারী, নিমাই সরকার, প্রশান্ত সরকার, শেখ লাভলু ও মোতালেব খানসহ অনেকে।
গাজিরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী বলেন, “চরহাজীগঞ্জ বাজারের বিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাই না। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অবৈধ স্থাপনা অপসারণ নিয়ে একাধিকবার উপজেলা মিটিংয়ে কথা বলেছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি।”
প্রশাসনের বারবার নির্দেশনা সত্ত্বেও বাজারে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাজারের পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসী।
Leave a Reply