রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :
বোচাগঞ্জে হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত, ওসির বক্তব্যে প্রশ্ন উঠছে বোচাগঞ্জে মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়ম: গাঁথুনির কাজ স্থগিতের নির্দেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর নির্বাচন: সভাপতি ও সম্পাদক পদে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল কাহারোলে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২ কর্মী আট বিএমবিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ  বালিয়াকান্দিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত, নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সালথা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহিন গ্রেপ্তার চরভদ্রাসনে মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন বালিয়াকান্দি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলেন এসিল্যান্ড বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন

গণমাধ্যমে ফাঁস : পরীক্ষার নামে প্রতারণার চিত্র

  • Update Time : রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০.৫১ এএম
  • ২৫৪ জন সংবাদটি পড়েছেন
মো. মাহ্বুব হোসেন
বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার এক মারাত্মক সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা সম্প্রতি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দেশব্যাপী গত ১০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এসএসসি, দাখিল এবং ভোকেশনাল পরীক্ষার সময়ে পরীক্ষার হলগুলোতে চলমান অনিয়মের চিত্র দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্ধকার দিক তুলে ধরছে। বিশেষ করে, নকলের মহোৎসব এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির খবর চমকে দেওয়ার মতো।
ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার হলে বই দেখে পরীক্ষা দিচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও এই অনৈতিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করছেন।
১৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে এটিএন নিউজ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার একটি মাদ্রাসার পরীক্ষা কেন্দ্রের গণিত পরীক্ষার দিনে অফিস সহকারী, কয়েকজন শিক্ষক, ফটোকপির দোকানদার এবং পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা একত্রে পরীক্ষার্থীদের নকল করতে সাহায্য করেছেন।
আর ২৩ এপ্রিল দৈনিক শিক্ষা ডটকমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘চুক্তিতে নকল সরবরাহের প্রতিযোগিতা’ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় রংপুরের মিঠাপুকুরের একটি কেন্দ্র সচিব জনৈক সাংবাদিককে হাঁটু ভেঙে পঙ্গু করে দেওয়ার হুমকি দেন।
এসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বছরের পর বছর দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এই ধরনের অনিয়ম চলে আসছে।
গুণগত শিক্ষার বদলে শুধুমাত্র পাশের হার বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিও নির্ভর করে পরীক্ষার ফলাফলের ওপর, তাই শিক্ষকরা প্রায়শই চাকরি রক্ষার্থে অনৈতিক সহযোগিতায় বাধ্য হন। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নেও স্বচ্ছতার অভাব প্রকট। বোর্ড কর্তৃক পরীক্ষকদের সভায় নম্বর প্রদানে উদারতা দেখাতে বলা হয়, যেন পাশের হার বেড়ে যায় এবং সরকার সন্তুষ্ট থাকেন। এক বোর্ড আরেক বোর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে, যার পেছনে উচ্চপদে পদোন্নতির লোভও কাজ করে।
এর ফলাফল চরম উদ্বেগজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে বিষয়টি সুস্পষ্ট। ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে কলা অনুষদে উত্তীর্ণ ৯%, বিজ্ঞান অনুষদে ১১%, বাণিজ্যে মাত্র ১৪%। ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে ‘ক’ ইউনিটে উত্তীর্ণ মাত্র ৫.৯৩%, আর চারুকলায় ২.৫৬%।
এই ফলাফল প্রমাণ করে যে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করলেও শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার পর্যায়ে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ প্রকৃত দক্ষতা গড়ে ওঠেনি—তারা অসদুপায় অবলম্বন করে উত্তীর্ণ হয়েছে।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি কিছু প্রস্তাবনা:
১. যত্রতত্র পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন বন্ধ করা।
২. উন্নতমানের সিসিটিভি থাকা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারণ এবং ফুটেজ কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৩. পরীক্ষকদের নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়নের স্বাধীনতা প্রদান।
৪. পাশের হার নয়, শিক্ষার গুণগত মান ও দক্ষতা বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।
৫. স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের আমন্ত্রণে ফরিদপুরে আগমন করেন মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি. আর. আবরার। ‘আগামীর শিক্ষা : প্রেক্ষিত বর্তমান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “বিগত দিনের পুঞ্জিভূত জঞ্জাল দূর করে শিক্ষার মান উন্নয়নে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”
এই বক্তব্য একটি আশাব্যঞ্জক বার্তা দেয়—যদি কথাগুলো বাস্তবায়িত হয়, তবেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব।
গণমাধ্যমে উঠে আসা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এ ভয়াবহ চিত্র শুধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে নয়, জাতির ভবিষ্যতের জন্যও বড় শঙ্কার বার্তা। তবে সঠিক পদক্ষেপ, স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে শিক্ষায় সংস্কার আনলেই পরিবর্তন সম্ভব।
আমরা প্রত্যাশা করি, বর্তমান সরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি দক্ষ, ন্যায়সঙ্গত এবং উন্নত জাতি গঠনের পথ তৈরি করবে।
লেখক:
মো. মাহবুবুর রহমান
সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ
ফরিদপুর সিটি কলেজ

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION