ঢাকাবুধবার , ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. টপ নিউজ
  7. ধর্ম
  8. ফিচার
  9. বিনোদন
  10. রাজনীতি
  11. লাইফস্টাইল
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সম্পাদকীয়
  15. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: টেকসই অগ্রগতির নির্ভরযোগ্য ভিত্তি

Doinik Kumar
এপ্রিল ১৬, ২০২৫ ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মো. মাহ্বুবুর রহমান 
বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাত হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। অথচ এই দুটি মৌলিক ও মানবিক খাত বছরের পর বছর ধরে চরম অবহেলার শিকার। আজও দেশের অধিকাংশ মানুষ মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার বাইরে রয়ে গেছে। জনপ্রশাসন কমিশন এ দুটি খাতের সংস্কারে কিছু সুপারিশ করলেও বাস্তবায়নের ঘাটতি এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে বলে বাংলাদেশের মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে না।
শিক্ষা খাতে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, দেশের প্রভাবশালী ও ধনী শ্রেণি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে শিক্ষা দিচ্ছেন। অথচ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থা নেই বললেই চলে। তারা এই দেশে আয় করলেও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগে অনীহা প্রকাশ করেন। অনেক সময় দেখা যায়, সন্তানদের বিদেশে পড়ানোর খরচ জোগাতে গিয়ে তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এর পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে এই শ্রেণির একটি বড় অংশ শুধু সন্তানদের পড়াশোনার খরচই পাঠান না, বরং সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অর্থ পাচারও করেন। পরিবার-পরিজনের নামে বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন, যা একটি জাতীয় দুর্নীতির চক্রে রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪,৪০০ কোটি টাকা। প্রতিবছর এই ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করছে। অথচ এই বিপুল অর্থ যদি দেশের উচ্চশিক্ষা অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করা হতো, তাহলে শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী হওয়ার প্রয়োজন অনেকাংশেই কমে যেত।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মেধা পাচার। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর অনেকেই আর দেশে ফেরেন না। তারা অন্য দেশের চাকরি, গবেষণা বা চিকিৎসাক্ষেত্রে যুক্ত হয়ে যান। ফলে, বাংলাদেশের টাকায় শিক্ষিত হলেও তাদের প্রতিভা ও শ্রম অন্য দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়। এতে একদিকে যেমন আমরা হারাচ্ছি জাতীয় সম্পদ, অন্যদিকে ভবিষ্যতের দক্ষ নেতৃত্ব ও জ্ঞানভিত্তিক উন্নয়নের সম্ভাবনাও হ্রাস পাচ্ছে।
শিক্ষার পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো স্বাস্থ্য। দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বড় ধরনের অসুস্থ হলে বিদেশে  চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন কারণ দেশীয়    চিকিৎসার প্রতি বিশ্বাসের অভাব। ধনী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও এ দেশের স্বাস্থ্যসেবার ওপর ভরসা না রেখে চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী হন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (উঈঈও) এক গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা প্রতিবছর প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেন বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার পেছনে। এটি দেশের জন্য এক বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় এবং দারুণভাবে উদ্বেগজনক একটি চিত্র।
এই পুরো পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিক হলো দেশের প্রবাসী শ্রমিকরা, যাঁরা দিনরাত পরিশ্রম করে কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠান, সেই রেমিট্যান্সই আবার পরোক্ষভাবে চলে যাচ্ছে বিদেশি শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে। দেশের অর্থনীতিতে যাঁদের অবদান সবচেয়ে বেশি, সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাঠানো টাকা ব্যবহৃত হচ্ছে ধনিক শ্রেণির বিলাসিতা ও বিদেশমুখী প্রবণতার পেছনে। এটি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, বরং এক ধরনের জাতীয় অবিচার।
এই বাস্তবতা থেকে উত্তরণের জন্য এখন সময় এসেছে সুস্পষ্ট ও সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার। প্রস্তাব করা যায়, যারা এই দেশের নীতিনির্ধারক, জনপ্রতিনিধি, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, বিচারক ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বাংলাদেশের বিদ্যমান শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার আওতায় থাকা বাধ্যতামূলক করা হোক। এই নীতি বাস্তবায়িত হলে তারা নিজেরাই এই খাতগুলোর ত্রুটি, দুর্বলতা ও সম্ভাবনা সরাসরি উপলব্ধি করতে পারবেন এবং উন্নয়নে আরও কার্যকর ও আন্তরিক ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হবেন।
এর ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার আর শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বাস্তব রূপ পাবে। এই বাধ্যবাধকতা কেবল সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা নয়; এটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীলতার নিদর্শন হবে। সময় এসেছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রকৃত উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার। কেবল বাজেট বরাদ্দ বাড়ালেই চলবে না, বাজেট বাস্তবায়নে দরকার স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং নীতিনির্ধারকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। যখন দেশের মানুষ নিশ্চিত হবে যে তারা নিজেদের দেশেই মানসম্মত শিক্ষা ও   চিকিৎসাসেবা পাবে, তখনই বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে। বিদেশমুখী প্রবণতা কমবে, মুদ্রা অপচয় রোধ হবে এবং অর্থনীতি হবে আরও মজবুত।
লেখক :
সহ.অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ
ফরিদপুর সিটি কলেজ, ফরিদপুর।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।