রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :
বোচাগঞ্জে হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত, ওসির বক্তব্যে প্রশ্ন উঠছে বোচাগঞ্জে মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়ম: গাঁথুনির কাজ স্থগিতের নির্দেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর নির্বাচন: সভাপতি ও সম্পাদক পদে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল কাহারোলে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২ কর্মী আট বিএমবিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ  বালিয়াকান্দিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত, নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সালথা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহিন গ্রেপ্তার চরভদ্রাসনে মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন বালিয়াকান্দি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলেন এসিল্যান্ড বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন

বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-বোনাস : অবহেলা, বৈষম্য ও জাতীয়করণের অনিবার্যতা

  • Update Time : বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৯.৩১ এএম
  • ১৪২ জন সংবাদটি পড়েছেন

মো. মাহবুবুর রহমান

বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-বোনাস প্রদান নিয়ে যে নাটকীয়তা ও অবহেলা দেখা গেছে, তা এক কথায় চরম হতাশাজনক ও লজ্জাজনক। সরকারের পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ২৭ মার্চ হবে ঈদের আগের শেষ কর্মদিবস, এবং এই দিন বিকাল ৬টা বা ৭টার মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা ব্যাংক হিসাবে জমা হবে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষকদের জন্য এটি হয়ে দাঁড়ায় এক নিষ্ঠুর তামাশা।
প্রথমে বলা হয়েছিল, ১৫-২০ মার্চের মধ্যে বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হবে। এরপর জানানো হয়, ২৩ মার্চ একসাথে বেতন ও বোনাস প্রদান করা হবে। সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ডিজি অফিস থেকে আশ্বাস দেওয়া হয় যে, কর্মকর্তারা নিরলস পরিশ্রম করছেন যাতে ২৭ মার্চের মধ্যেই শিক্ষকদের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা হয়। শিক্ষকেরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও দেখতে পেলেন, তারা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
ব্যাংকে গিয়ে চেক হাতে অপেক্ষা করা শিক্ষকরা দিনের শেষে একরাশ হতাশা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। একসময় পত্রিকায় দেখতাম, গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেতন-বোনাস না পেয়ে আন্দোলন করছে। কিন্তু আজ দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকরাও বেতন-বোনাসের জন্য সংবাদ শিরোনাম হচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এমন বৈষম্যমূলক পরিস্থিতির কারণে মেধাবীরা শিক্ষকতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে শূন্য পদের বিপরীতে পর্যাপ্ত যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য কোথাও চাকরির সুযোগ না পেলে, তখনই অনেকে শিক্ষকতা পেশায় আসছেন। এর ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে মানের ব্যাপক অবনতি ঘটছে, যা ভবিষ্যতে জাতির জন্য ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞানের ৯৪% শিক্ষার্থী ফেল করেছে, যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সংকটেরই ইঙ্গিত দেয়।
অন্যদিকে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৩ মার্চের আগেই বেতন-বোনাস পেয়ে গেছেন। এমনকি সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাও যথাসময়ে তাদের বেতন ও বোনাস পেয়েছেন। তাহলে কেন বেসরকারি শিক্ষকরা এত বৈষম্যের শিকার হলেন? তারা এমনিতেই কম বেতনে চাকরি করেন, তারপরও তাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হলো। শেষ মুহূর্তে বেতন-বোনাস পেলেও হাতে মাত্র একদিন সময় থাকায় অধিকাংশ শিক্ষক টাকা তুলতে পারেননি। যারা তুলতে পেরেছেন, তাদেরও সীমিত সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত খরচ করে কেনাকাটা করতে বাধ্য করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের গাফিলতি, অবহেলা ও অসহযোগিতাই দায়ী। প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, শিক্ষা অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কর্মকর্তা বদলি বাণিজ্য ও ঘুষ লেনদেনে ব্যস্ত ছিলেন, ফলে শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে দেরি হয়েছে। তাদের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মচারীদেরও একদিন ছুটির সময় কমিয়ে কাজ করতে হয়েছে, অথচ এর জন্য তারা কোনোভাবেই দায়ী ছিলেন না।
এই বৈষম্যমূলক আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। শিক্ষকদের প্রতি এহেন অবিচার অব্যাহত থাকলে, আগামী দিনে দেশে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে। এর স্থায়ী সমাধান একটাই—শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ।
শিক্ষা খাতকে জাতীয়করণ ছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো বাস্তবসম্মত পথ নেই। দেশের উন্নতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঠিক বিকাশের জন্য শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা অপরিহার্য। তাই সরকারের উচিত অবিলম্বে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দিকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং শিক্ষকদের প্রতি অবিচার ও বৈষম্য দূর করা।
লেখক : সরকারি অধ্যাপক, 
ইংরেজি বিভাগ, ফরিদপুর সিটি কলেজ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION