রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :
বোচাগঞ্জে হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত, ওসির বক্তব্যে প্রশ্ন উঠছে বোচাগঞ্জে মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়ম: গাঁথুনির কাজ স্থগিতের নির্দেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর নির্বাচন: সভাপতি ও সম্পাদক পদে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল কাহারোলে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২ কর্মী আট বিএমবিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ  বালিয়াকান্দিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত, নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সালথা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহিন গ্রেপ্তার চরভদ্রাসনে মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন বালিয়াকান্দি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলেন এসিল্যান্ড বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন

বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-বোনাস প্রদানে নিষ্ঠুর তামাশার নাটকীয় অবসান

  • Update Time : শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫, ১২.১০ পিএম
  • ৪৬৯ জন সংবাদটি পড়েছেন
॥ মো. মাহবুবুর রহমান ॥
আগের থেকেই সরকারিভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল,  ২৭ মার্চ ঈদুল ফিতরের আগের শেষ কর্ম দিবস। একটানা নয় দিন ছুটি। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মরত শিক্ষক  ও কর্মচারীদের বেতন -ভাতাদিও ২৭ তারিখ বিকাল ছয়টায় /সাতটায় ব্যাংক হিসাবে  জমা হয়।বেশ কয়েকদিন ধরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ডিজি অফিস থেকে বলা হচ্ছিল,  চলতি মাসের ১৫/২০ তারিখের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষক/ কর্মচারীদের  বেতন- ভাতাদি তাদের ব্যাংক  একাউন্টে জমা হবে। তারপর  জানানো হয় মার্চ মাসের ২৩ তারিখ বেতন ও বোনাস এর টাকা একসাথে  জমা হবে। তারপর সর্বশেষ জানানো হয় শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ডিজি অফিসের কর্মচারীরা  ছুটি না কাটিয়ে রাত-দিন পরিশ্রম করে  চলছে শিক্ষকদের বেতন ভাতাদি ঈদের আগেই একাউন্টে পাঠানোর জন্য যাতে শিক্ষকরা শেষ কর্ম দিবসে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষকরা অপেক্ষা করছিল কবে/ কখন তাদের বেতন ও বোনাস এর টাকা ব্যাংকে জমা পড়বে। সর্বশেষ আশা করেছিল ২৭ তারিখে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবে। কেউ কেউ চেকের পাতা পকেটে নিয়ে  ব্যাংকে গিয়েছে  টাকা উত্তোলনের প্রত্যাশায়। কিন্তু সারাদিন অপেক্ষায় থেকে ব্যাংকিং আওয়ার শেষে  একরাশ হতাশা নিয়ে শূন্য হাতে বাসায় ফিরেছেন। এই চরম নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে  শিক্ষক সমাজের পাশাপাশি সারা দেশবাসী জানল শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষকরা  সমাজে কতটা অবহেলিত। এক সময় পত্রিকার পাতায়  ও টিভির সংবাদে  দেখতাম গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেতন বোনাস নিয়ে আন্দোলন করছে। এইবার দেখলাম, শিক্ষকদের বেতন- বোনাস   নিয়ে পত্রিকার পাতায় লেখালেখি। যেটা কোনভাবেই কাম্য ছিল না। আমি মনে করি এটা গোটা জাতির জন্য লজ্জাস্কর বিষয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা এই পেশা থেকে ব্যাপকভাবে  মুখ ফিরিয়ে নেবে।যা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে শূন্য পদের বিপরীতে প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না । অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে  অন্য কোথাও চাকরির সংস্থান   না হলে তখনই  শুধু এই পেশাতে আসছে । এই অবস্থা চলতে থাকল শিক্ষকতা  পেশায় ভালো লেখাপড়া জানা লোক পাওয়া দুষ্কর হবে। যেটা জাতির জন্য কাম্য নয়। চলতি বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইন্স  গ্রুপে ৯৪ % এর বেশি  ছেলেমেয়েরা ফেল করেছে।আর  ৬% এর কম পাস করেছে।  এটা একটা অশনি সংকেত বলে মনে করি ।
২৭ তারিখে   তারা কাজ সম্পন্ন করে ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারলেন । তাহলে আগে কেন পারলেন না? আমরা মনে করি এটা তাদের সম্পূর্ণ গাফিলতি, অবহেলা ও অসহযোগিতার কারণে   এই অনাকাঙ্খিত  পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে  জানতে পেরেছি যে,  পরিচালক বদলি বাণিজ্য এবং ইএমআইএস সেল- এর  দুই জন কর্মকর্তা ঘুষ  বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাদের তাদের এই নিষ্ঠুর অবহেলা ও গাফিলতির  জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কর্মচারীরাও একদিন কম ছুটি ভোগ করলেন। অথচ কোনভাবেই এই পরিস্থিতির জন্য তারা দায়ী না। অন্যের দায়ে তারা প্রাপ্য  ছুটি থেকে বঞ্চিত হলেন ।
রাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৩ তারিখের আগেই চলতি মাসের বেতন ও বোনাস পেয়েছেন ।সরকারি স্কুল- কলেজের শিক্ষকরাও  চলতি মাসের বেতন  ও বোনাস পেয়েছেন। সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী।  তাহলে কেন এই বৈষম্যমূলক ও বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হলেন বেসরকারি স্কুল -কলেজের  শিক্ষকরা। এমনিতেই  বেসরকারি শিক্ষকরা অতি অল্প বেতনের বিনিময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করে থাকেন।তার উপর বেতন ভাতাদি  পাওয়ার ক্ষেত্রেও এই বৈষম্য । ব্যাংক থেকে বেতন উত্তোলনের পরে হাতে পেল  মাত্র  একদিন বা দুদিন। অধিকাংশ শিক্ষক বেতন ও বোনাস উত্তোলন করতে পারে  নাই। যারা  এই অল্প সময়ের মধ্যে বেতন- বোনাস তুলতে  পেরেছে, তাদেরকে  সীমিত সময়ের মধ্যে যেনতেন  পণ্য তাড়াহুড়ো করে  বেশি টাকা খরচ করে কিনতে হল । কি বিচিত্র দেশ!!
শিক্ষা বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তারা  বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক  খোলা রেখে বেসরকারি  শিক্ষকদের প্রতি যেন  দয়া  দেখালেন। এটা শিক্ষকদের প্রতি দয়া বা অনুগ্রহ  দেখানোর  বিষয় নয়। যথা সময় বেতন- ভাতাদি পাওয়া প্রত্যেকটা কর্মীর ন্যায্য  অধিকার। এভাবে  বেতন- ভাতাদি প্রদানের ব্যবস্থা করে  শিক্ষক সমাজকে অপমানিত করা হয়েছে। শিক্ষকরা কম টাকা দিয়ে সমাজে সম্মানের সাথে টিকে থাকার চেষ্টা করতেন। সম্মানটাই  ছিল  তাদের একমাত্র পুঁজি। তাইবা থাকলো কই?  এই গাফিলতির জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি । যাতে ভবিষ্যতে কেউই এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে  সাহস না পায়। তাই সময় এসেছে শিক্ষাখাতের   বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের। সচেতন মহল মনে করে পুরা শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণই এই সমস্যা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে পারে।
লেখক :
সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ।
ফরিদপুর সিটি কলেজ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION