বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন

সড়কের ওপর শতবর্ষী হাট, প্রতি হাটে বিক্রি আড়াই কোটি টাকার মাছ

  • Update Time : রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২.২৮ পিএম
  • ১৪০ জন সংবাদটি পড়েছেন

কুমিল্লার পদুয়ার বাজার। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছ বাজার হিসেবে পরিচিত। শতবর্ষী এই বাজারের সুনাম রয়েছে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলাজুড়ে। সপ্তাহে মাত্র দুদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য সড়কের ওপর বসে এই হাট। প্রতি হাটে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। অন্য বাজারের তুলনায় এই বাজার কমদামে দেশি ও সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাজারে নারী ও পুরুষ ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। ছোট-বড় সব অনুষ্ঠানের জন্য মাছ কিনতে কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলা থেকে আসেন ক্রেতারা। রাত যত গভীর হয় মাছের দাম ততোই কমতে থাকে। এ যেন এক মাছের রাজ্য।

সড়কের ওপর শতবর্ষী হাট, প্রতি হাটে বিক্রি আড়াই কোটি টাকার মাছ

সরেজমিনে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটের দিন বেলা ১১টা থেকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের মাছ ব্যবসায়ীরা ট্রাক, পিকআপ, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যানে করে পদুয়ার বাজারে আসেন বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ও সামুদ্রিক মাছ নিয়ে। এইসব মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতল, শিং, মাগুর, কৈ, টাকি, শোল, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, বোয়াল, আইড়, বাইন, গজার, ইলিশ, রূপচাঁদা, লইট্টা, কোরাল, টুনা ও গলদা চিংড়িসহ আরও অনেক। বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রুই, কাতলা, কৈ, তেলাপিয়া, পাঙাস, মৃগেল, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড ও সামুদ্রিক মাছ। এই বাজারে সামুদ্রিক কাঁকড়াও পাওয়া যায়। প্রতিহাটে ছোট-বড় প্রায় দেড় থেকে দুইশ দোকান বসে। বিক্রি হয় দেড় থেকে ২০০ মেট্রিক টন মাছ।

দুপুর আড়াইটা থেকে বাজারে বাড়তে থেকে ক্রেতা সমাগম। বেচা-বিক্রি হয় মধ্যরাত পর্যন্ত। প্রতি হাটে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এই বাজারে কুমিল্লা মহানগরীর চকবাজার, কান্দিরপাড়, টমছম ব্রিজ, জাঙ্গালিয়া, কচুয়া চৌমুহনী, সদর দক্ষিণ উপজেলার রাজাপাড়া, দিশাবন্দ, নোয়াগাঁও, মোস্তফাপুর, বেলতলি, কোটবাড়ি, সুয়াগাজী, চৌয়ারা, চৌদ্দগ্রাম, লালমাই, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, চান্দিনাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা থেকেও ক্রেতারা আসেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মাছ কিনতে। এই বাজার থেকে মাছ কিনতে পেরে যেমন খুশি ক্রেতারা, বিক্রি করতে পেরেও খুশি ব্যবসায়ীরা।

সড়কের ওপর শতবর্ষী হাট, প্রতি হাটে বিক্রি আড়াই কোটি টাকার মাছ

কাজী এয়াকুব আলী নামে এক ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, বাগমারা থেকে এসেছি মাছ কিনতে। বর্তমান বাজারে যেভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পদুয়ার বাজার কুমিল্লা অঞ্চলের নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য স্বস্তিদায়ক। আমার মতো অনেকেই সন্ধ্যা নামার অপেক্ষায় থাকেন। কারণ রাতে মাছের দাম নিম্নগামী হয়। এই বাজার থেকে আমি সবসময় মাছ কিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মাছ কিনতে আসা সোহাগ নামে এক যুবক বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কুমিল্লার মধ্যে অনেক বাজার রয়েছে। পদুয়ার বাজারে কম দামে নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। যার কারণে কয়েক দিন পরপর এখান থেকে মাছ নিয়ে যাই।

মো. জসিম উদ্দিন নামে আরেক ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, এই বাজারে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো সিন্ডিকেট না থাকায় সুলভ মূল্যে মাছ বিক্রি হয়। ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির তরতাজা মাছ পাওয়া যায়। কুমিল্লা নগরীতে ৫/৬টি মাছের বাজার রয়েছে। আমি সেখান থেকে না কিনে এই বাজার থেকে মাছ নিয়ে যাই।

ফেনীর মোহাম্মদ আলী এলাকার নাজিম উদ্দিন বলেন, ভাতিজার বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মাছ কিনতে এসেছি। দুই মণ মাছ লাগবে। এখানে কম দামে ভালোমানের মাছ পাওয়া যায়। আমাদের এলাকায় যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য সবাই এই বাজারে আসেন মাছ কিনতে।

মাছ ব্যবসায়ী জুলহাস মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমি দাউদকান্দি থেকে এসেছি। এই বাজারে মাছ বিক্রি করি অন্তত ২৫ বছর ধরে। এর আগে আমার বাবাও এখানে ব্যবসা করতেন। এলাকায় বিভিন্ন মাছের প্রজেক্ট থেকে মাছ সংগ্রহ করে এখানে নিয়ে আসি। বিশেষ করে দেশি মাছের চাহিদা ভালো। ক্রেতা বেশি হওয়ায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মাছ বিক্রি হয়ে যায়। এতে লাভের পরিমাণও ভালো। এখানে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসেন।

সড়কের ওপর শতবর্ষী হাট, প্রতি হাটে বিক্রি আড়াই কোটি টাকার মাছ

ব্যবসায়ী আবু সাঈদ বলেন, প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার পদুয়ার বাজারে মাছের মেলা বসে। প্রতি হাটে কমপক্ষে ৮-১০ মণ মাছ বিক্রি করি। গত ১০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করি। প্রতিবাজারে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হয়। আল্লাহর রহমতে পরিবার নিয়ে ভালো আছি।

শাহাজান মিয়া জানান, চট্টগ্রামের ফিসারিঘাট থেকে সামুদ্রিক মাছ এনে এখানে বিক্রি করি। জাটকা, রূপচাঁদা, লইট্টা, কোরাল, টুনাসহ অন্তত ১০-১৫ ধরনের সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করি।

পদুয়ার বাজারের ইজারাদার মো. কামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই বাজার। এখানে আড়তদার, সিন্ডিকেট কিছুই নেই। যার মাল সেই বিক্রি করে। আমরা সামান্য পরিমাণ খাজনা আদায় করি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো এবং বাজার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ায় ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে মাছ কেনেন। প্রতি বৃহস্পতিবার ও রোববার অনেক দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতা আসেন মাছ কিনতে। যেকোনো মূল্যে আমরা বাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION