২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনের চাকরি ফেরত চেয়ে দায়ের করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি শেষ করা হয়েছে। এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিন ঠিক করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আরও পড়ুন:
২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিতদের আপিল শুনবেন সুপ্রিম কোর্ট
২৭ তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত প্রায় ১২০০ জনের লিভ টু আপিল মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আগামী ৪ ডিসেম্বর তাদের আবেদনের ওপর আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
পৃথক তিনটি রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে এদিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন ও মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।
২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় ৩ হাজার ৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ওই বছরের ৩০ মে প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ওই বছরের ১ জুলাই প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিল করে এবং দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীক্ষার্থীরা।
২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তার আগে ওই বছরের ২৯ জুলাই দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে সরকারপক্ষ। ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগ সেই লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ।
পরে আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২৭তম বিসিএসে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। চূড়ান্ত সুপারিশের পর যখন প্রায় ১২০০ জন চাকরিতে ঢুকবেন, তখন ওই সিদ্ধান্ত হয়। পরে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষার বিরুদ্ধে মামলা হলো। হাইকোর্ট বিভাগে আবেদনকারীরা জিতেছিলেন। কিন্তু আপিল বিভাগ সিপিতে (লিভ টু আপিল) বলেছিলেন দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা কারেক্ট (সঠিক) ছিল। আজ সেটা রিভিউ করলাম।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি কোর্ট লিভ টু আপিল মঞ্জুর না করে রায় বাতিল করেছিলেন, এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। এই যে ২৭তম বিসিএসের সুপারিশপ্রাপ্ত প্রায় ১২০০ জন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলেন। আদালত আমাদের লিভ মঞ্জুর করেছেন, আগামী ৪ ডিসেম্বর শুনানির জন্য আপিল হিসেবে আসবে।
কেন তাদের বাদ দেওয়া হলো এ প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘জনমনে আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যে। আমরা বলেছি এটা কোনো কারণ হতে পারে না। তদন্তের পর তৎকালীন পিএসসির চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে বলেছিলেন- কোনো অনিয়ম পাননি। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় এটা হয়েছে।
ভাঙছে ‘প্রথা’, ৩০ নভেম্বরের আগেই ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি
টানা পাঁচ বছর ধরে ৩০ নভেম্বর বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আসছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ফলে প্রস্তুতি আগেভাগে শেষ হলেও নভেম্বরের শেষ দিনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়টি অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এবার তা থেকে সরে আসছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। প্রস্তুতি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এ কারণে এবার নির্ধারিত (৩০ নভেম্বর) সময়ের আগেই ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে।
পিএসসির পরীক্ষা শাখার (ক্যাডার) একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শূন্যপদের সংখ্যা জানিয়ে পিএসসিতে চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে ৩ হাজার ৪৬০টি শূন্যপদে ক্যাডার নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী—শিগগির বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। প্রস্তুতি শেষ হলে সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞপ্তি হবে। ৩০ নভেম্বরের জন্য অপেক্ষা করা হবে না।
পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম বলেন, ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। কবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যাবে, তা কমিশন সভায় ঠিক করা হবে। দ্রুততম সময়ে সেটা (বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ) করার চেষ্টা চলছে।
জানা যায়, এবার বিসিএসে কত শূন্যপদে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে, তা জানতে চেয়ে গত সেপ্টেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল পিএসসি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পিএসসির সেই চিঠির জবাবে গত ২৩ অক্টোবর চাহিদাপত্র পাঠায়। তাতে ৪৭তম বিসিএসে ৩ হাজার ৪৬০টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
পিএসসির তথ্যানুযায়ী—এবারের শূন্যপদের সংখ্যাটি বিগত ১০টি বিসিএসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ৪৬তম বিসিএসে ৩ হাজার ১০০ পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি, যা বিগত ১০ বিসিএসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। সেই রেকর্ডও এবার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
কোন বিসিএসে কত শূন্যপদ ছিল
সবশেষ ৪৬তম বিসিএসে শূন্যপদ ছিল ৩ হাজার ১০০টি। তার আগে ৪৫তম বিসিএসে ২ হাজার ৩০৯টি, ৪৪তম বিসিএসে ১ হাজার ৭১০টি, ৪৩তম বিসিএসে ১ হাজার ৮১৪, ৪১তম বিসিএসে ২ হাজার ৫২০, ৪০তম বিসিএসে ১ হাজার ৯২৯, ৩৮তম বিসিএসে ২ হাজার ২৪, ৩৭তম বিসিএসে ১ হাজার ২২৬, ৩৬তম বিসিএসে ২ হাজার ১৮০টি, ৩৫তম বিসিএসে ১ হাজার ৮০৩টি এবং ৩৪তম বিসিএসে ২ হাজার ১৫৯টি।
তবে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে প্রায় ৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছিল। সাধারণ বিসিএসের সঙ্গে সেটিকে তুলনা করা হয় না বলে জানিয়েছে পিএসসি সূত্র।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা আপিলের শুনানি নিয়ে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ রায়ের জন্য এদিন ধার্য করেন।
Leave a Reply