নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর
ফরিদপুরে যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর গায়ে পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে রয়েল মণ্ডল (৪৬) নামে এক স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এ মামলায় অপর দুই আসামির জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) শামীমা পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন।
জানা যায়, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েল মণ্ডল রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত থাকায় তাকে পুলিশ পাহারায় কারাগারে পাঠানো হয়। রয়েল মণ্ডল ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামের হালিম মণ্ডলের ছেলে। এ মামলায় খালাসপ্রাপ্তরা হলেন রয়েল মণ্ডলের বড় ভাই খায়ের মণ্ডল (৫০) ও ভাবি পলি বেগম (৪০)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামের হালিম মণ্ডলের ছেলে রয়েল মণ্ডলসহ পরিবারের লোকজন তার স্ত্রী মলিনা বেগমকে (২০) যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালিয়ে গায়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় স্ত্রী সেলিনা বেগমকে ফরিদপুর মেডিকেল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান। এ ঘটনার পর নিহতের বাবা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের শোলাকুন্ডু গ্রামের আব্দুর রহমান খাঁ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ৯ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বিয়ের পর হতে যৌতুকের দাবিতে সেলিনা বেগমকে বিভিন্ন সময় স্বামী রয়েল মণ্ডলসহ পরিবারের লোকজন নির্যাতন চালাত। এ দম্পতির কোলজুড়ে দুই যমজ পুত্রসন্তান ও এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।
সন্তানদের দিকে তাকিয়ে নির্যাতন সহ্য করেও স্বামীর কাছে সেলিনা বারবার ফিরে যান। এরপর পুনরায় দুই লাখ টাকা দাবি করেন রয়েল। সেই টাকা না দেওয়ায় সেলিনাকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়। খবর পেয়ে সেলিনার বাবা সেখানে যান এবং পরে চলে আসেন। ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সেলিনার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেন স্বামী রয়েল। সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যায় সেলিনা।
এ মামলায় ২০১১ সালের ১৩ জুলাই তিনজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুনীল কুমার কর্মকার। দীর্ঘ সাক্ষ্যপ্রমাণ ও শুনানি শেষে আজ সোমবার (১১ আগস্ট) রায় ঘোষণা করেন আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া রতন বলেন, ‘এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট প্রকাশ করছি। সমাজে যৌতুকের জন্য কারো যেন প্রাণ দিতে না হয়। সেজন্য আদালত ন্যায়বিচার করে এ রায় ঘোষণা করেছেন।’
Leave a Reply