পশ্চিম সুদানের দারফুর এলাকাটি আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) দখলে নেওয়ার পর হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেছে। সেখান থেকে কোনোভাবে বেঁচে যারা পালিয়ে আসতে পেরেছেন, তাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছিল। চোখের সামনে তারা আপনজনদের মৃত্যু দেখেছেন। শিকার হয়েছে ক্ষুধার যন্ত্রণার। খবর আল জাজিরার
শনিবার (১ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী এল-ফাশের ছিল এই অঞ্চলে সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি। টানা ১৮ মাস অবরোধের পর রোববার সেটি দখলে নেয় আরএসএফ। এ ঘটনার পর থেকেই জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে সতর্ক করতে শুরু করে। কেননা, তখন থেকেই এল-ফাশেরসহ দারফুরের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য নৃশংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এখন সেখানকার পরিস্থিতি অতি মাত্রায় ভয়াবহ।
তাওইলায় আশ্রয় নেওয়া আরও কয়েকজন নারী জানান, আরএসএফ যোদ্ধারা তাদের পিটিয়েছে, কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছে, এমনকি নারীদের শরীরও তল্লাশি করেছে। ফাতিমা আবদুররহিম বলেন, আমরা পাঁচ দিন হেঁটে তাওইলা শহরে পৌঁছেছি। পথে ছেলেদের মারধর করা হয়, সবকিছু লুটে নেয়। আমাদের সঙ্গে থাকা মেয়েদের কেউ কেউ পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার রাতে গণমাধ্যমে ভাষণ দেন আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেদতি। তিনি বলেন, বেসামরিকদের রক্ষায় তার বাহিনীকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। পরদিন বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, তারা কিছু অপরাধী যোদ্ধাকে গ্রেপ্তার করেছে। এ দাবি নিয়ে অবশ্য জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, বাস্তবে তারা এসব অপরাধের তদন্তে কোনো আন্তরিকতা দেখাচ্ছে না।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত দশ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দেশজুড়ে দুর্ভিক্ষ ও কলেরার মতো রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
তাদের তথ্যে দেখা গেছে, অক্টোবরের ২৭ তারিখে তাওইলায় আশ্রয় নেওয়া ৭০ জন শিশুর সবাই অপুষ্টিতে ভুগছে। ৫৭ শতাংশ শিশুর অবস্থাও ‘অতি গুরুতর’।
হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন জানিয়েছেন, আরএসএফ যোদ্ধারা পালিয়ে আসা মানুষদের বয়স, লিঙ্গ ও জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে আলাদা করে। অনেককে মুক্তিপণ দাবিতে বন্দি করে রাখে। দাবিকৃত অর্থ ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি সুদানি পাউন্ড (৮ হাজার থেকে প্রায় ৫০ হাজার ডলার) পর্যন্ত।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল জানিয়েছে, গত ২৯ অক্টোবর এল-ফাশের মাতৃত্ব হাসপাতালেই আরএসএফ সদস্যদের হাতে কমপক্ষে ৪৬০ জন নিহত হয়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন রোগী, দর্শনার্থী, বাস্তুচ্যুত মানুষ ও স্বাস্থ্যকর্মী।
এদিকে, এল-ফাশের থেকে দক্ষিণে উত্তর কোরদোফান প্রদেশেও আরএসএফ নতুন করে হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘ জানায়, সম্প্রতি দখল করা বারা এলাকায় অন্তত ৩৬ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। সংস্থাটির আশঙ্কা, পরবর্তী বড় যুদ্ধক্ষেত্র হবে এখানকার রাজধানী এল-ওবেইদ, যা এখনও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দ্যুজারিক বলেন, বারা শহরে রেড ক্রিসেন্টের পাঁচ স্বেচ্ছাসেবীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া যৌন সহিংসতারও উদ্বেগজনক প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি।
সুদান ডাক্তার্স নেটওয়ার্কের মুখপাত্র মোহাম্মদ এলশেখ বলেন, বারা থেকে এল-ওবেইদ পর্যন্ত পালিয়ে আসা মানুষরা চরমভাবে দুর্বল, তাদের হাঁটতে হচ্ছে মরুভূমি পেরিয়ে। সেখানে দিনে প্রচণ্ড গরম আর রাতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা।
এই অঞ্চলে আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর লড়াই অব্যাহত। জুলাই মাসে সংগঠনিটির এক হামলায় উত্তর কোরদোফানের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হয়। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল।
