বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন

এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বাস্তবতা: আমাদের করণীয় কি?

  • Update Time : সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ৯.৪৬ এএম
  • ১৩৭ জন সংবাদটি পড়েছেন

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পর শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং নীতিনির্ধারক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেক এলাকায় দেখা যাচ্ছে, আগের বছরের তুলনায় পাশের হার কমেছে। অভিভাবকরা প্রশ্ন তুলছেন—“রেজাল্ট খারাপ হলো কেন?”
তবে শিক্ষাবিদ ও বোর্ড কর্তৃপক্ষের মতে, এবারের ফলাফলে শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি বড় নীতিগত পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটেছে। আর তা হলো—সহানুভূতির নম্বর নয়, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মূল্যায়ন।
পূর্বের প্রেক্ষাপট :
পূর্বের বছরগুলোতে বোর্ডের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে পাশের হার বৃদ্ধি দেখিয়ে শিক্ষার উন্নয়ন জাহির করার চাপ ছিল। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত যোগ্যতা যাচাই না করে বাড়তি নম্বর দেওয়া হতো। এর পেছনে ছিল
* ভোটের রাজনীতি
* বোর্ড কর্মকর্তাদের প্রাইজ পোস্টিংয়ের আশায় নম্বর বাড়িয়ে দেখানো
* শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য
ফলে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও বাস্তব জীবনে দক্ষতার ঘাটতিতে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় তার প্রমাণ মিলেছে।

নতুন বার্তা : প্রকৃত মূল্যায়ন
২০২৫ সালের এসএসসি ফলাফলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে—সহানুভূতির নম্বরের যুগ শেষ, চাই প্রকৃত মূল্যায়ন। শিক্ষকদের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে রেজাল্টে বাস্তবতা প্রতিফলিত হচ্ছে।
চলমান এইচএসসি পরীক্ষায়ও শিক্ষকরা নতুন নির্দেশনায় প্রকৃত মূল্যায়নে মনোযোগী হচ্ছেন। এতে পাশের হার ভবিষ্যতে আরও কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আমাদের করণীয়:
শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং নীতিনির্ধারক—সবারই দায়িত্ব আছে। চারটি স্তরে করণীয় স্পষ্টভাবে নির্ধারণ জরুরি।
১. শিক্ষকের করণীয় :
* লেসন প্ল্যান অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাস নেওয়া।
* সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে খাতা মূল্যায়ন।
* দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি সহায়তা।
* মনোযোগী ক্লাস পরিবেশ নিশ্চিত করা।
* অভিভাবকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা।
* অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর গার্ডিয়ানকে ফোন বা বার্তা পাঠানো।
* অভ্যন্তরীণ ফলাফল অভিভাবকদের জানানো।
* প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা বাড়ানো এবং ডিজিটাল শিক্ষায় অভ্যস্ত হওয়া।
২. শিক্ষার্থীর করণীয় :
* প্রতিদিন রুটিন মেনে পড়াশোনা করা।
* নিজে পড়ার ও বোঝার অভ্যাস গড়ে তোলা।
* মোবাইল, গেম ও টিভির সময় সীমিত রাখা।
* শিক্ষক ও অভিভাবকের নির্দেশনা মেনে চলা।
* মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থাকলে খোলামেলা আলোচনা করা।
৩. অভিভাবকের করণীয় :
* সন্তানের পড়াশোনার খবর রাখা।
* নিয়মিত স্কুলে পাঠানো নিশ্চিত করা।
* খাতা-কলম ও পড়ার উপকরণে নজর রাখা।
* সন্তানের সময় ব্যবহারে নজরদারি করা।
* শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা।
* সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যে নজর দেওয়া এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করা।
৪. নীতিনির্ধারকের করণীয় :
* শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে পেশায় মনোযোগী করা।
* জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি।
* শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ।
* অভিভাবক-শিক্ষক সমন্বয় সভা বাধ্যতামূলক করা।
* মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
* রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন।
* পরিচালনা পর্ষদে প্রকৃত শিক্ষিতদের অন্তর্ভুক্তি।
* অবসরপ্রাপ্ত যোগ্য শিক্ষকদের কাজে লাগানো।
* শিক্ষা বাণিজ্য ও গাইডবুক ব্যবসা বন্ধ করা।
* প্রতিটি স্কুলে ডিজিটাল ক্লাসরুম ও আইটি সুবিধা।
* শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী কারিগরি ও জীবনদক্ষতা বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
* স্কুল পর্যায়ে কাউন্সেলিং সেন্টার চালু।
* শিক্ষা গবেষণায় বাজেট ও ফলাফলভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ।

শিক্ষা শুধু পরীক্ষায় পাশের কাগুজে ফল নয়—এটি একটি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গড়ার চাবিকাঠি। সহানুভূতির নম্বর দিয়ে সাময়িক সান্ত্বনা মিললেও দক্ষতা তৈরি হয় না।
এখন সময় এসেছে—শিক্ষক হোক অনুপ্রেরণার প্রতীক, শিক্ষার্থী হোক শেখার যোদ্ধা, অভিভাবক হোক পথপ্রদর্শক, আর নীতিনির্ধারক হোক দূরদর্শী পরিকল্পনার কারিগর। সবাই মিলে দায়িত্ব পালন করলেই আমরা গড়ে তুলতে পারব দক্ষ, সৃজনশীল ও নৈতিকতায় উজ্জ্বল এক আলোকিত প্রজন্ম।
সময় এখন—হাতে হাত রেখে সেই পরিবর্তনের সূচনা করার।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION