রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০২:০২ পূর্বাহ্ন

ভুঁড়িভোজের পর কোমল পানীয় পানে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

  • Update Time : বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫, ৯.২২ এএম
  • ১৬২ জন সংবাদটি পড়েছেন
এম. এম. রহমান, ফরিদপুর
ঈদ মানেই আনন্দ-উৎসব, আর উৎসব মানেই পেটপুরে খাওয়া-দাওয়া। মাংস, বিরিয়ানি, কাবাব-সবই চলে একসাথে। এমন ভারী ভোজের পরে অনেকেই কোমল পানীয় পান করেন হজমের ভরসায়। কিন্তু চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই অভ্যাস হজমের বদলে শরীরে ডেকে আনতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।
হজমে সহায়ক নয় কোমল পানীয় :
গোশতের মতো প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার হজম করতে পাকস্থলীতে পেপসিন ও গ্যাস্ট্রিক জুসের নির্দিষ্ট pH প্রয়োজন হয়। কোমল পানীয়তে থাকা কার্বোনেশন ও ফসফরিক অ্যাসিড এই pH ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, ফলে হজম ধীর হয় এবং গ্যাস-অম্বল দেখা দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আকতারুজ্জামান বলেন, “ভরা পেটে কোমল পানীয় পানের ফলে হজম-প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা আরাম লাগলেও দীর্ঘমেয়াদে পাকস্থলী দুর্বল হয়ে পড়ে।”
গবেষণায় যা জানা গেছে :
‘Food and Research International’-এর ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে:
 দিনে মাত্র ১ ক্যান কোমল পানীয় পান করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৬% পর্যন্ত বাড়ে।
 দীর্ঘমেয়াদে হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে অস্টিওপোরোসিস দেখা দিতে পারে।
 কোমল পানীয়তে থাকা ইথিলিন গ্লাইকল নামক রাসায়নিক কিডনি ও লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০২৪ সালের একটি প্রতিবেদনে বলেছে:
“Soft drinks are among the top five contributors to the global rise of childhood obesity and early-onset metabolic disorders.” অর্থাৎ কোমল পানীয় শিশুদের মধ্যে স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের মতো বিপজ্জনক রোগের অন্যতম উৎস।
দাঁতের ক্ষতি ও শিশুর ঝুঁকি :
বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি (BDS) জানায়, কোমল পানীয় নিয়মিত পান করলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে থাকে, যা দাঁতভাঙা ও সংবেদনশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশুদের ক্ষেত্রে এই ক্ষতি দ্রুত হয় এবং ভবিষ্যতে দাঁতের গঠনেও প্রভাব ফেলে।
বিকল্প হিসেবে যা যা পান করা যায় :
ঈদ বা যেকোনো উৎসবের পর ভারী খাবারের হজমে সহায়তা পেতে নিচের প্রাকৃতিক পানীয়গুলো হতে পারে স্বাস্থ্যকর বিকল্প:
ডাবের পানি: প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ এই পানীয় শরীরকে হাইড্রেট রাখে ও হজমে সহায়তা করে।
লেবু পানি: হালকা অ্যাসিডিক স্বভাবের কারণে এটি লিভার পরিষ্কারে সহায়তা করে এবং ভিটামিন C সরবরাহ করে।
 চিনি ছাড়া ফলের রস: এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক ফাইবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও হজমে সহায়ক।
জিরা-লেবুর পানি: প্রাকৃতিক হজম বর্ধক হিসেবে কাজ করে; গ্যাস-অম্বল দূর করতে কার্যকর।
হালকা গরম পানি: পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং হজম প্রক্রিয়াকে করে আরও সক্রিয় ও সুষ্ঠু।
স্বাস্থ্য-বান্ধব অভ্যাসে যা করবেন :
 খাওয়ার পর ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
হালকা হাঁটাচলা করুন অন্তত ১০-১৫ মিনিট।
 প্রতি তিন ঘণ্টা পরপর হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
কোমল পানীয়ের বদলে ঘরে তৈরি শরবত বা আয়ুর্বেদিক পানীয় বেছে নিন।
উৎসবের খাওয়ার পর কোমল পানীয় পান করা অনেকের অভ্যাসে পরিণত হলেও এটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বরং হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত করে, শরীরকে দীর্ঘমেয়াদে করে তোলে রোগপ্রবণ। সুস্থতা ও সচেতনতা দিয়ে সাজিয়ে তুলুন উৎসবের আনন্দ। কোমল পানীয় নয়, বেছে নিন প্রকৃতিকে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION