রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :
বোচাগঞ্জে হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত, ওসির বক্তব্যে প্রশ্ন উঠছে বোচাগঞ্জে মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়ম: গাঁথুনির কাজ স্থগিতের নির্দেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর নির্বাচন: সভাপতি ও সম্পাদক পদে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল কাহারোলে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২ কর্মী আট বিএমবিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ  বালিয়াকান্দিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত, নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সালথা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহিন গ্রেপ্তার চরভদ্রাসনে মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন বালিয়াকান্দি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলেন এসিল্যান্ড বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন

মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুণ

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫, ৯.৩৯ এএম
  • ১৫৭ জন সংবাদটি পড়েছেন

শিশুর বিকাশ থেকে সকলের সুস্থতায় মিষ্টি আলু

বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরের পরিচিত একটি সবজি মিষ্টি আলু। সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী এই খাদ্যটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে এখনও অনেকেই সচেতন নন। অথচ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ থেকে শুরু করে বড়দের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ত্বকের যত্নে এই সবজির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
শিশুর স্বাস্থ্য ও বিকাশে মিষ্টি আলু :
বিটা ক্যারোটিন, ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ভিটামিন সি  -সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু শিশুর চোখের দৃষ্টি উন্নত করে, হাড় মজবুত করে, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
বিশেষ করে বিটা ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন A-তে রূপান্তর হয়ে চোখ ও ত্বকের সুরক্ষা দেয়। তবে এই রূপান্তরের জন্য খাদ্যতালিকায় সামান্য স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন ঘি বা নারকেল তেল) থাকা জরুরি।
ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়, আর প্রাকৃতিক শর্করা ও কার্বোহাইড্রেট শিশুর ওজন বাড়াতে সহায়ক। ম্যাঙ্গানিজ শিশুদের হাড়ের গঠন ও এনজাইম কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বড়দের জন্যও সমান উপকারী :
কম ফ্যাট ও উচ্চ আঁশযুক্ত হওয়ায় মিষ্টি আলু হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় কার্যকর। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীর ডিটক্স করতে সাহায্য করে এবং কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করে। বিটা ক্যারোটিন ত্বক উজ্জ্বল রাখে, চুল পড়া কমায় এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়ক।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের উপকার :
মিষ্টি আলুতে থাকা ফোলেট ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন গর্ভকালীন রক্তস্বল্পতা রোধে সহায়ক। অতিরিক্ত ক্যালরি ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ স্তন্যদানের সময় মায়ের শক্তি ও দুধের গুণমান বাড়াতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য :
মিষ্টি আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) সাধারণ আলুর চেয়ে কম, অর্থাৎ এটি ধীরে শর্করা মুক্ত করে রক্তে চিনির পরিমাণ দ্রুত বাড়ায় না।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সিদ্ধ বা বেকড মিষ্টি আলু প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৭৫-১০০ গ্রাম (আধা কাপ) পর্যন্ত খাওয়া নিরাপদ। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য পরিকল্পনা করা উচিত।
রান্না ও সংরক্ষণের উপায় :
 সিদ্ধ করলে ভিটামিন সি কিছুটা রক্ষা পায়, তবে বিটা ক্যারোটিন কিছুটা কমে।
 বেকড করলে বিটা ক্যারোটিন শোষণ ২০% পর্যন্ত বাড়ে, বিশেষত যদি স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন অলিভ অয়েল) দিয়ে রান্না করা হয়।
 ভাজা করলে ক্যালোরি অনেক বেড়ে যায়, পুষ্টিগুণ কমে।
 সংরক্ষণের উপযুক্ত তাপমাত্রা    13-15°C; ফ্রিজে না রাখাই ভালো, এতে পচন দ্রুত ঘটে।
পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ফসল :
মিষ্টি আলু কম পানি ও কম সার প্রয়োগেও ভালো ফলন দেয়। এটি মাটির উর্বরতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত-যেমন খরা বা বন্যা-মোকাবিলায় টিকে থাকতে পারে বলেও কৃষিবিজ্ঞানীরা মত দিয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা ও অর্থনৈতিক দিক :
জাপানে “সাতসুমা ইমো”, কোরিয়ায় “গোগুমা”, উগান্ডায় “কামো” নামে  পরিচিত এই খাদ্যটি বর্তমানে শিশুদের পুষ্টির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
FAO  ও WHO-এর মতে, ভিটামিন A এর ঘাটতি উন্নয়নশীল দেশে শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ। এই ঘাটতি পূরণে বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ কমলা মিষ্টি আলু একটি কার্যকর, সাশ্রয়ী সমাধান। আফ্রিকার উগান্ডা, নাইজেরিয়া ও রুয়ান্ডায় ইতিমধ্যেই ÔBiofortified Orange Fleshed Sweet PotatoÕ-(OFSP) এর সাফল্য পাওয়া গেছে।
সতর্কতা :
 অতিরিক্ত খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিক বা অম্বলের সমস্যা হতে পারে।
কিডনি রোগীদের জন্য সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, কারণ এতে অক্সালেট থাকে যা কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
 শিশুদের জন্য :
৬ মাস বয়সের নিচে শুধুমাত্র মিষ্টি আলু-পিউরি উপযোগী। ভারী বা মিষ্টিজাত খাবার (যেমন হালুয়া) ৮-১০ মাসের পর ধাপে ধাপে দেওয়া উচিত।
অভিজ্ঞদের মতামত :
ফরিদপুর সিটি কলেজের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিলকিস সুলতানা এর মতে ,“মিষ্টি আলু হলো ভিটামিন অ-এর প্রাকৃতিক উৎস। এটি শিশুদের চোখের সুরক্ষা, হাড়ের গঠন এবং বড়দের রোগ প্রতিরোধে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এটি সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হওয়ায় পরিবারের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত।”
সাধারণ ভুল ধারণা :
ভুল : “মিষ্টি আলু ডায়াবেটিস বাড়ায়।”
সত্য : কম GI থাকার ফলে এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ভুল : “শুধু শীতকালীন সবজি।”
সত্য : সারা বছর চাষযোগ্য ও বাজারে সহজলভ্য।
ভুল : “মিষ্টি আলু খেলে ওজন বাড়ে।”
সত্য : এটি প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ হলেও উচ্চ আঁশ ও কম ফ্যাটযুক্ত হওয়ায় পরিমিত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রেসিপি আইডিয়া :
 শিশুদের জন্য: মিষ্টি আলু-আপেল পিউরি, মিষ্টি আলুর হালুয়া (৮ মাস বয়সের পর)।
 বড়দের জন্য: গ্রিলড মিষ্টি আলু স্যালাড, মিষ্টি আলুর স্যুপ।
 ডায়াবেটিকদের জন্য: মিষ্টি আলুর রোটি, অলিভ অয়েলে বেকড মিষ্টি আলু।
সামাজিক উদ্যোগ :
বাংলাদেশে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) এর (WFP) Gi Food Fortification Program–এ মিষ্টি আলু অপুষ্টি মোকাবিলায় ব্যবহার হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় শিশুদের  পুষ্টিহীনতা রোধে মিষ্টি আলুর একটি সম্ভাবনাময় ভূমিকা রাখছে।
মিষ্টি আলু শুধু একটি সবজি নয়, এটি প্রতিটি বয়সের মানুষের জন্য এক অনন্য পুষ্টির উৎস। শিশুর বেড়ে ওঠা হোক কিংবা একজন বৃদ্ধের রোগ প্রতিরোধ-সবক্ষেত্রেই মিষ্টি আলু হতে পারে সুস্থতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
 লেখক : মো. মাহবুবুর রহমান
সহ. অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ
ফরিদপুর সিটি কলেজ, ফরিদপুর।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION