রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :
বোচাগঞ্জে হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত, ওসির বক্তব্যে প্রশ্ন উঠছে বোচাগঞ্জে মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়ম: গাঁথুনির কাজ স্থগিতের নির্দেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর নির্বাচন: সভাপতি ও সম্পাদক পদে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল কাহারোলে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২ কর্মী আট বিএমবিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ  বালিয়াকান্দিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত, নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সালথা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহিন গ্রেপ্তার চরভদ্রাসনে মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন বালিয়াকান্দি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলেন এসিল্যান্ড বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন

ফল এক, গুণ অনেক : কাঁঠালের সম্ভাবনার বাংলাদেশ

  • Update Time : বুধবার, ৭ মে, ২০২৫, ১০.২৪ এএম
  • ৩৪০ জন সংবাদটি পড়েছেন
মোঃ মাহবুবুর রহমান
গ্রীষ্মের দুপুরে কাঁঠালের সুগন্ধে ভরে ওঠা বাংলার আঙিনা শুধু স্মৃতির নয়,      সম্ভাবনারও আখ্যান রচনা করে। সোনালি আঁশে মোড়া এই ফলটি একদিকে যেমন বাংলার ঐতিহ্য, তেমনি কৃষি-অর্থনীতির এক সম্ভাবনাময় প্রতীক। পুষ্টিগুণে ভরপুর, বহুমুখী ব্যবহারে কার্যকর এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা নিয়ে কাঁঠাল এখন আর শুধু ঘরের  আঙিনার স্বাদ নয়-এটি হতে পারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি।
বর্তমানে দেশের ৭৬,২৯৫ হেক্টর জমিতে বার্ষিক প্রায় ১৯ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয় (২০২২–২৩)। অথচ এই বিপুল উৎপাদনের বিপরীতে রপ্তানি হচ্ছে মাত্র ০.১১%, যেখানে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড রপ্তানি করে প্রায় ৩০%। এই পরিসংখ্যান কেবল একটি হিসাব নয়-এটি একটি সম্ভাবনার দুয়ার, যার চাবিকাঠি আমাদেরই হাতে।
উৎপত্তি ও বিস্তার :
দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলঙ্কা কাঁঠালের আদি নিবাস হলেও বাংলাদেশে এটি চাষ হয় প্রায় সর্বত্র। বিশেষ করে ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, দিনাজপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় উৎপাদন বেশি। বারি উদ্ভাবিত ‘বারি কাঁঠাল-৩’ জাতটি আঠাবিহীন, ফলে রপ্তানির জন্য উপযোগী।
উন্নত জাত আবিষ্কারের অগ্রগতি :
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইঅজও) কাঁঠালের উৎপাদনশীলতা ও রপ্তানিযোগ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত জাত উদ্ভাবনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ‘বারি কাঁঠাল-১’, ‘বারি কাঁঠাল-২’ ও ‘বারি কাঁঠাল-৩’ সহ কয়েকটি জাত মাঠপর্যায়ে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ‘বারি কাঁঠাল-৩’ জাতটি আঠাবিহীন ও স্বল্প গন্ধযুক্ত হওয়ায় রপ্তানির জন্য বিশেষভাবে উপযোগী হিসেবে বিবেচিত। পাশাপাশি স্বল্প উচ্চতায় ফল ধারণকারী জাত উদ্ভাবন কৃষকদের জন্য পরিচর্যা সহজ করেছে। গবেষণা চলছে এমন জাত উদ্ভাবনে, যা সারা বছর ফল দিতে সক্ষম—এতে বাজারে সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হবে এবং মূল্যও স্থিতিশীল থাকবে।
পুষ্টিমূল্য ও স্বাস্থ্য উপকারিতা :
কাঁঠাল এক অনন্য পুষ্টির আধার:
 প্রতি ১০০ গ্রামে ৩০৩ মিগ্রা পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আঁশ
 ভিটামিন বি৬, থায়ামিন, নায়াসিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ
 ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
 বীজে থাকা প্রোটিন ও আয়রন হাড় গঠনে ও হজমে উপকারী
 ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারবেন। তবে দুই-তিনটি কোয়ার বেশি নয়। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উত্তম।
বহুমুখী ব্যবহার :
কাঁঠাল খাদ্য ও শিল্প-দুই ক্ষেত্রেই কার্যকর:
 পাকা কাঁঠাল: জ্যাম, জেলি, আইসক্রিম
 কাঁচা কাঁঠাল: ‘এঁচোড়’ তরকারি (বাংলাদেশ ও ভারতে জনপ্রিয়),
     ভেজিটেবল মিট, বার্গার, স্যান্ডউইচ
 বীজ: ভাজা, সিদ্ধ, পিঠার উপাদান
 কাঠ: টেকসই আসবাব ও বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
বিশ্বজুড়ে নিরামিষ প্রেমীদের কাছে ভেজিটেবল মিট হিসেবে কাঁঠালের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইঅজও) ইতোমধ্যে উদ্ভাবন করেছে ফ্রোজেন পণ্য ও কাঁঠালচিপস—যা খাদ্যশিল্পে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ :
প্রতি বছর প্রায় ২৫–৪৫% কাঁঠাল নষ্ট হয়-মূল্যমান প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। উন্নত পদ্ধতি অনুসরণ করলে সংরক্ষণকাল বাড়ানো যায়:
 কোষ ব্লাঞ্চিং করে পটাশিয়াম মেটাবাইসালফাইটে সংরক্ষণ
 রেফ্রিজারেটরে ২ সপ্তাহ, ডিপ ফ্রিজে ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণযোগ্য
অর্থনৈতিক গুরুত্ব :
 কাঁঠালগাছ খরা সহনশীল, প্রতিবছর শোষণ করে ৩০-৫০ কেজি কার্বন
 ফল, বীজ ও কাঠ—সবই বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক
 বিশ্ববাজারে কাঁঠালজাত পণ্যের মূল্য এখন ৩২৪ মিলিয়ন ডলার, যা
    ২০৩২ সালে দাঁড়াবে ৩৯৬ মিলিয়নে
রপ্তানির সম্ভাবনা :
২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে মাত্র ২,২১০ টন কাঁঠাল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ভেজিটেবল মিট ও ফ্রেশ-কাট পণ্যের চাহিদা হু হু করে বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধান গন্তব্য। রপ্তানিযোগ্য কাঁঠালকে ঘিরে যদি প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা যায়, তাহলে রপ্তানি আয় ১০ গুণ বাড়ানো সম্ভব।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয় :
 কিছু কাঁঠালে অতিরিক্ত আঠা ও গন্ধ থাকায় রপ্তানিতে সমস্যা-শীতকালীন জাত এ সমস্যা কমাতে পারে।
 আধুনিক প্রক্রিয়াজাত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ জরুরি।
 কেমিক্যাল দিয়ে কৃত্রিমভাবে কাঁঠাল পাকানো বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা
    ও জনসচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—কারণ এসব রাসায়নিক মানব স্বাস্থ্যের
     জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
উপসংহার :
জাতিসংঘের ঋঅঙ-এর “ঙহব ঈড়ঁহঃৎু, ঙহব ঋৎঁরঃ” নীতিমালায় বাংলাদেশ বেছে নিয়েছে কাঁঠালকে। সঠিক জাত নির্বাচন, নিরাপদ প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজার গবেষণা ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে কাঁঠাল হতে পারে- “ফল এক, গুণ হাজার—বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনার শক্তিশালী স্তম্ভ।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION