রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :
বোচাগঞ্জে হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত, ওসির বক্তব্যে প্রশ্ন উঠছে বোচাগঞ্জে মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়ম: গাঁথুনির কাজ স্থগিতের নির্দেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর নির্বাচন: সভাপতি ও সম্পাদক পদে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল কাহারোলে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২ কর্মী আট বিএমবিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ  বালিয়াকান্দিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত, নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সালথা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহিন গ্রেপ্তার চরভদ্রাসনে মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন বালিয়াকান্দি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলেন এসিল্যান্ড বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন

পরীক্ষার নামে প্রহসন: শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন

  • Update Time : রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ৯.২৫ এএম
  • ২৮৯ জন সংবাদটি পড়েছেন
মো.মাহ্বুবুর রহমান
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষা। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এক উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে।ইলেকট্রনিক ,  প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়ার  মাধ্যমে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা নারান্দিয়ায় তোফাজ্জল হোসেন তুহিন  কারিগরি স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে  বই দেখে  উত্তরপত্রে লিখছে । দুঃখজনকভাবে, অনেক ক্ষেত্রেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষকও এই অনৈতিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করছেন।
এই চিত্রটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বহু বছর ধরেই এমন ঘটনা ঘটে আসছে, যা অনেক সময় আড়ালে থেকে যায়। বিগত সময়ে শিক্ষার গুণগত মানের চেয়ে পাশের হার বাড়ানোকে  সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও চলমান থাকা নির্ভর করে পরীক্ষার ফলাফলের ওপর। ফলে অনেক শিক্ষক এমপিও স্থিতি রক্ষার জন্য পরীক্ষার হলে অনৈতিক সহায়তার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন ।
পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব। বোর্ড কর্তৃক আয়োজিত প্রধান পরীক্ষকদের সভা এবং খাতা বিতরণ সভায় পরীক্ষকদের উদারভাবে নম্বর দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়, যার মূল উদ্দেশ্য পাশের হার বৃদ্ধি এবং  সরকারের সুদৃষ্টি ও সন্তুষ্টি অর্জন। এক বোর্ড অন্য বোর্ডকে পরীক্ষার  ফলাফলে পাশের হারের দিক থেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। অনেক সময় এর আড়ালে শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য থাকে প্রাইজ পোস্টিং লাভ করা—যা অনেকে সফলভাবেই অর্জনও করছেন। এর ফলে খাতা মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্ব দেখা যায়, যা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধার মূল্যায়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এই প্রক্রিয়ার পরিণতি অত্যন্ত ভয়ংকর ও উদ্বেগজনক। একারণে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেও অনেক শিক্ষার্থী বাংলা ও ইংরেজি সঠিকভাবে পড়তে বা লিখতে পারে না।  বিষয়টি বারবার প্রমাণিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে।
ভর্তি পরীক্ষার বাস্তব চিত্র:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল অত্যন্ত নিম্ন।
* ‘ক’ ইউনিট (বিজ্ঞান অনুষদ): উত্তীর্ণের হার ছিল ৮.৮৯%।
* ‘খ’ ইউনিট (কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ): উত্তীর্ণের হার ছিল ১০.০৭%।
* ‘গ’ ইউনিট (বাণিজ্য অনুষদ): উত্তীর্ণের হার ছিল ১৩.৩৩%।
* ‘চ’ ইউনিট (চারুকলা অনুষদ): উত্তীর্ণের হার ছিল ১১.৭৫%।
২০২৪২৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাবি’র ভর্তি পরীক্ষায় ‘ক’ ইউনিটে ( বিজ্ঞান অনুষদে) উত্তীর্ণের হার ৫.৯৩℅  ‘চ’ ইউনিটো (চারুকলা অনুষদে) উত্তীর্ণের হার ২.৫৬%।
এই ফলাফল থেকে স্পষ্ট, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার পর্যায়ে গিয়ে চরম ব্যর্থতার মুখোমুখি হচ্ছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে উত্তীর্ণ হওয়া, যার ফলে প্রকৃত দক্ষতা অর্জিত হচ্ছে না।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কিছু জরুরি প্রস্তাবনা:
১. পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারণে কঠোর নীতিমালা গ্রহণ:
যত্রতত্র পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন বন্ধ করে নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুযায়ী কেন্দ্র নির্ধারণ করতে হবে।
২. সিসি ক্যামেরা নির্ভর মনিটরিং ব্যবস্থা:
শুধুমাত্র উন্নতমানের সিসিটিভি-সজ্জিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে এবং পরীক্ষাকালীন সিসিটিভি ফুটেজ সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৩. স্বাধীন ও নিরপেক্ষ খাতা মূল্যায়ন নিশ্চিত করা:
পরীক্ষকদের নিরপেক্ষভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়নের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধা প্রতিফলিত হয়।
৪. নীতিগত সংস্কার ও জবাবদিহিতা:
শুধু পাশের হার নয়, শিক্ষার গুণগত মান ও দক্ষতা বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষা প্রশাসনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ হয়।
আশা করছি, চলমান এসএসসি পরীক্ষা থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উত্তরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতা আনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। একই সঙ্গে, আগামী এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণের ক্ষেত্রেও এসব প্রস্তাবনা গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে কার্যকর করা হলে শিক্ষাক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব হবে। আমাদের প্রিয় সন্তানেরা সুযোগ্য হয়ে  বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।  আমাদের ধারণা,এ ব্যাপারে  এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে, একদিন পুরো জাতিকে এর মাশুল গুনতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION