সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৩৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :
চোট পেয়ে ১১ মিনিটে মাঠ ছাড়লেন মেসি ৫ আগস্ট বন্ধ থাকবে সব ব্যাংক টিটি দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন ২৫ বছর বয়সি থাই কোচ বোচাগঞ্জে হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত, ওসির বক্তব্যে প্রশ্ন উঠছে বোচাগঞ্জে মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়ম: গাঁথুনির কাজ স্থগিতের নির্দেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর নির্বাচন: সভাপতি ও সম্পাদক পদে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল কাহারোলে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২ কর্মী আট বিএমবিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ  বালিয়াকান্দিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত, নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সালথা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহিন গ্রেপ্তার

দ্বিচারী কূটনীতির ভারতীয় স্টাইল

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ১২.০৭ পিএম
  • ১২৪ জন সংবাদটি পড়েছেন

বাংলাদেশে তখন একতরফা নির্বাচনের আয়োজন চলছিল। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনের আগে ৪ জানুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলছিল সাপ্তাহিক ব্রিফিং। বক্তব্য রাখছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। বিএনপি, জামায়াতসহ অনেক দলের বর্জন সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের ওই নির্বাচন আয়োজন নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না, এ বিষয়ে ভারতের অবস্থান কী? তখন জয়সওয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত বলে আসছি, বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। ’

 

এরপর এলো জুলাই। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে দেশের রাজপথ তখন উত্তাল। হাসিনার নির্দেশে তার দল আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার এবং পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে রাজপথে ঝরছিল শত শত প্রাণ। এই পরিস্থিতির মধ্যে ২৫ জুলাই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলছিল সাপ্তাহিক ব্রিফিং। সেখানে বক্তব্য রাখছিলেন জয়সওয়াল। যথারীতি তাকে বাংলাদেশের আন্দোলন পরিস্থিতি ঘিরে ভারতের অবস্থানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তখন ভারত সরকারের এ মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের ঘটনাবলীর দিকে ভারত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছে। তবে সেখানে যা চলছে, তা সম্পূর্ণভাবে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ’

বাংলাদেশের রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের ‘প্রভাবের’ কথা সচেতন মহলের জানা। ওয়ান-ইলেভেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনসহ অতীতে তাদের এই প্রভাবের বিষয়টি মাথায় নিয়ে স্বভাবতই গত জানুয়ারি ও জুলাইয়ের ওই দুই ব্রিফিংয়ে মুখপাত্রের কাছে দিল্লির অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। জবাবে কেবলই বাংলাদেশের নির্বাচন বা ঘটনাপ্রবাহ ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলেন ভারত সরকারের মুখপাত্র জয়সওয়াল।

আরও পড়ুন: নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়: ভারত

কিন্তু তাদের কাছে বিষয়টা ‘অভ্যন্তরীণ’ ছিল কেবল গত ৫ আগস্ট পর্যন্তই। সেদিন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটলে রাতারাতি ভোল পাল্টে যায় দিল্লির কর্তাব্যক্তিদের। পলাতক শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া ভারত একের পর এক বক্তব্য-বিবৃতি দিতে থাকে বাংলাদেশের বিষয়ে, তাদের গণমাধ্যমে চলতে থাকে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার, যা ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ পর্যন্ত করে ঢাকা।

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নাক গলাতে চাওয়ার সবশেষ নজির দেখা গেল গত ৭ মার্চ। সেদিন সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জয়সওয়াল। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশকে সমর্থন করি; যেখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সব সমস্যার নিষ্পত্তি হবে। ’

দেশের সিংহভাগের বেশি দলের বর্জন সত্ত্বেও ২০২৪ সালের ‘ডামি’ নির্বাচন আয়োজনকে ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয় বলেছিল যে ভারত, সেই তারা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা বলায় বিভিন্ন মহলে উষ্মা প্রকাশ পাচ্ছে। অনেকে খোলাখুলি বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে দেড় সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা হত্যায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগকেই নির্বাচনে টানার জন্য ভারত এমন ‘বার্তা’ দিচ্ছে। যদিও জুলাই গণহত্যার বিচারের আগে নির্বাচন আয়োজন নিয়েই আপত্তি জানিয়ে আসছেন অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা। এমনকি জার্মানির নাৎসি পার্টি ও ইতালির ফ্যাসিস্ট পার্টির মতো আওয়ামী লীগকেই নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

বিগত তিন নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা
বাংলাদেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক কেলেঙ্কারির শুরুটা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। দেশের নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর ১৯৯০-এর দশকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়। এই ব্যবস্থার অধীনেই পরবর্তী কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যদিও ২০০৮ সালের নির্বাচন আয়োজক সরকার ‘ওয়ান-ইলেভেন’র সরকার বলে আলোচিত। অনেকে মনে করেন, সেনাসমর্থিত এই সরকারের কার্যক্রম আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ছিল।

নবম সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। বিএনপি, জামায়াতসহ বিপুল সংখ্যক দল আওয়ামী সরকারের অধীনে ভোটে অংশ নেবে না বললেও শাসকগোষ্ঠী তা কানে তোলেনি। ‘সংবিধানের দোহাই’ দিয়ে তারা এক তরফা নির্বাচন আয়োজন করে। এতে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জনই বিনা ভোটে ‘নির্বাচিত’ হন।

দেশের সুশীল সমাজসহ পশ্চিমা বিশ্বও ওই নির্বাচন নিয়ে আপত্তি জানায়, কিন্তু এর পক্ষে সমর্থন আদায়ে খোলাখুলি অবস্থানে ছিল ভারত।

তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে করতে দেওয়া হবে না—বিরোধী দলগুলো এমন অবস্থানে যখন রাজপথে হরতাল-অবরোধ করছিল, তখন অর্থাৎ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা সফরে আসেন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। ওই পরিস্থিতিতে (প্রয়াত) জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যদের বয়কটের কারণে প্রথম দিকে এরশাদও নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন। এতে দেশে এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়, যার ফলে সংশয় দেখা দেয় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নিয়ে। কিন্তু সুজাতা সিং সফরে এসে এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে এবং এক পর্যায়ে সরকার চাপ দিলে জাতীয় পার্টির এ নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হন।

বিবিসি বাংলার ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সফরে এসে সুজাতা সিং দেখা করেন জাতীয় পার্টির নেতা এরশাদের সঙ্গে। বলা হয়—তিনি (সুজাতা) তাকে (এরশাদকে) অনুরোধ করেছিলেন পরের বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION