সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ১০:২১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :
চোট পেয়ে ১১ মিনিটে মাঠ ছাড়লেন মেসি ৫ আগস্ট বন্ধ থাকবে সব ব্যাংক টিটি দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন ২৫ বছর বয়সি থাই কোচ বোচাগঞ্জে হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত, ওসির বক্তব্যে প্রশ্ন উঠছে বোচাগঞ্জে মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়ম: গাঁথুনির কাজ স্থগিতের নির্দেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর নির্বাচন: সভাপতি ও সম্পাদক পদে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল কাহারোলে নিষিদ্ধ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২ কর্মী আট বিএমবিসি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ  বালিয়াকান্দিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত, নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সালথা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শাহিন গ্রেপ্তার

জামিল আহমেদের পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন ফারুকী

  • Update Time : শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫, ৪.৩০ পিএম
  • ১৪৯ জন সংবাদটি পড়েছেন

প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ছাড়ার ঘোষণার দেওয়ার পর সৈয়দ জামিল আহমেদ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’সহ সংস্কৃতি উপদেষ্টার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

 

জামিল আহমেদের ‘অনেকগুলা কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলা কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল না করতে পারাজনিত হতাশা থেকে বের হয়ে আসা’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালায় মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্য উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।

 

সে অনুষ্ঠানেই শিল্পকলার সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

 

জামিল আহমেদের পদত্যাগের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মন্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করে। কিন্তু উপদেষ্টা কল ধরেননি।

 

পরদিন শনিবার ফারুকী তার ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “সৈয়দ জামিল আহমেদের কাজের একজন গুণমুগ্ধ আমি। সম্ভবত উনার কাজ নিয়ে বাংলাদেশে কোনো পত্রিকায় ছাপা হওয়া সবচেয়ে বিস্তারিত লেখাটা আমি লিখেছিলাম যায়যায়দিনের এন্টারটেইনমেন্ট ম্যাগাজিন মৌচাকে ঢিলের জন্য।” এর পরেও বাংলা-ইংরেজি অনেক কাগজে লিখেছি। এখনও আমি তাঁকে বাংলাদেশের থিয়েটারের সবচেয়ে মেধাবী নির্দেশক মনে করি। কয়দিন আগেও জামিল আহমেদের সামনেই একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেছি উনাকে দিয়ে তাদের দেশে একটা থিয়েটার প্রোডাকশন করাতে।”

 

‘ভালো শিল্পী হওয়া আর আমলাতন্ত্রকে কনফিডেন্সে নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো দুইটা দুইরকম আর্ট’ বলে মনে করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।

 

‘আমলাতন্ত্রকে কনফিডেন্সে নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানোর কাজটি করার জন্য ধৈর্য এবং ম্যানেজারিয়াল ক্যাপাসিটি লাগে’ বলেও মন্তব্য করেন ফারুকী।

 

উপদেষ্টার ভাষ্য, “কলিগদের বুলিং না করে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা দিয়ে অনেক কাজ আদায় করে নেওয়া যায়। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে যে কম্পোজার লাগে, সেটার সাথে কোনো একটা থিয়েটার দলে নির্দেশনা দেওয়ার টেম্পারামেন্ট এক না। আমার ফিল্ম ইউনিটে আমি যা করতে পারি, একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমি তা করতে পারি না।”

 

জামিল আহমেদের পদত্যাগের বিষয়ে ফারুকী বলেন, “আমি জামিল ভাইয়ের নাটকীয় পদত্যাগ নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম না, কারণ তাতে আমাকে এমন কিছু রেফারেন্স টানতে হবে যেটা তাঁর জন্য অস্বস্তিকর হবে।”

 

“আমি চাচ্ছিলাম না, কারণ আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ফর রেকর্ডস আমাকে আসলে এগুলো বলতেই হবে। আজকে আমাদের অনেকগুলা কাজ আছে। এটা শেষ করে সময় পেলে লিখবো।”

 

 

 

জামিল আহমেদের মঙ্গলকামনা করে ফারুকী বলেন, “উনার সৃজনশীল কাজে যেকোনোভাবে সহযোগিতা করতে পারলে মন্ত্রণালয় ধন্য হবে। আর আমি আমার দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার পরও তাঁর কোনো সাহায্যে আসলে আনন্দিত হবো, যদিও আমাদের দুইজনের কাজের ক্ষেত্র আলাদা।”

 

ফারুকীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে জামিল আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি কল ধরেন নি। তবে শুক্রবার রাতে পদত্যাগের কারণ জানিয়ে একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি।

 

জামিল আহমেদ বলেছেন, উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে ‘ফোকাল পারসন’ হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান, বাজেট কর্তন, শিল্পকলার ভেতর থেকে ফাইল গায়েব করে দেওয়া, একাডেমির অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানাবিধ অপতৎপরতার কারণে তিনি শিল্পকলার মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

 

গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে সচিব পদমর্যাদায় মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক জামিল আহমেদ।

 

জামিল আহমেদের ভাষ্য, “বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মহাপরিচালক পদে আমাকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৎকালীন সংস্কৃতি উপদেষ্টার (আসিফ নজরুল) পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে, আমি বলেছিলাম, শিল্পকলা একাডেমি আইন অনুযায়ী একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে এবং আমি একাডেমির ভিশন ও মিশন সম্বলিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করি।”

 

“তৎকালীন উপদেষ্টা ও সচিবালয়ের সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার সকল প্রস্তাব ও কর্মপরিকল্পনায় তখন সম্মত হয়েছিলেন। তাদের সম্মতি ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করতে সম্মত হই।”

 

 

 

ফারুকী উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সকল বিধিসম্মত কাজে নীতি-বহির্ভূত পদ্ধতিতে বারংবার হস্তক্ষেপ শুরু হয় বলে অভিযোগ করেন জামিল আহমেদ।

 

তিনি বলেন, “একাডেমির সকল কর্মকাণ্ডকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্লথ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়। যেমন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর একাডেমির সভা করার বিধান থাকা সত্ত্বেও পরিষদ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করতে উপদেষ্টা পাঁচ সপ্তাহ অহেতুক সময় নেন।”

 

একটি ভিডিও নির্মাণের জন্য কোনো লিখিত চিঠিপত্র ব্যতিত উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ‘টাকা প্রদানের জন্য চাপ’ দেওয়া হলে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করার কথাও বলেন জামিল আহমেদ।

 

তিনি বলেন, “যোগদানের সময় আমি যে ভিশন ও মিশন উপস্থাপন করেছিলাম সেই অনুযায়ী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তৃণমূল হতে কেন্দ্র পর্যন্ত সংস্কার, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রায়নের জন্য বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভায় উত্থাপন করলে তা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে বরাদ্দ করা হয়।”

 

 

 

জামিল আহমেদ মনে করছেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যে গণমুখী কাঠামোগত ও অবকাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে বহুত্ববোধক সাংস্কৃতিক চর্চায় নতুন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করতে দেশব্যাপী সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

 

তার ভাষ্য, “বর্তমানে একাডেমির অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টির হীন প্রচেষ্টা লক্ষ্য করছি। এমতাবস্থায়, চতুর্দিকে ঘিরে থাকা চক্রের সঙ্গে আপোস করে আমার পক্ষে যে উদ্দেশ্য নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছিলাম সেই লক্ষ পূরণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় বিধায় আমি পদত্যাগ করেছি।”

 

তার আগে নাট্যশালা মিলনায়তনে নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর উপস্থিত সবাই জামিল আহমেদকে মহাপরিচালক পদে থাকার অনুরোধ করলে তিনি চারটি শর্তের কথা বলেন।

 

তিনি বলেন, এই শর্তগুলো মানা হলে তিনি সিদ্ধান্ত বিবেচনা করবেন।

 

প্রথম শর্ত হিসেবে সৈয়দ জামিল বলেন, “মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পকলা একাডেমির কাজে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না। এটা সংবাদ সম্মেলন করে বলতে হবে।”

 

“শিল্পকলাকে একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে দিতে হবে। যদি শিল্পকলা আইনগত সমস্যা করে, তবে পরামর্শ দেবে। কিন্তু হস্তক্ষেপ করবে না।”

 

এছাড়া শিল্পকলার কাজের জন্য তিনি ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন, যার চিঠি দিতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে।

 

তিন নম্বর শর্ত হিসেবে তিনি বলেছেন, “শিল্পকলায় মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ‘ফোকাল পয়েন্ট’ থাকবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে।”

শনিবার দুপুরে ফারুকী তার ফেইসবুক আইডি থেকে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, “আমার বিস্তারিত লেখা হয়তো উনাকে বিব্রত করতে পারে। কিন্তু আমাকে আপনি এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন, যেখানে আমাকে বিব্রতকর হলেও সত্য বলতে হবে, জামিল ভাই।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION