রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন

চরভদ্রাসনে পদ্মায় বাঁশের বাধ দিয়ে চলছে জাটকা ইলিশ নীধন

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫, ৩.৪৬ পিএম
  • ১৯২ জন সংবাদটি পড়েছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক,  চরভদ্রাসন

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার মাথাভাঙ্গা গ্রামের বিশাল কলা বাগানের পাশে পদ্মা নদীতে  আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে গত ক’দিন ধরে চলছে জাটকা ইলিশ নীধনের মাহাযজ্ঞ। পদ্মা নদীর উক্ত পয়েন্টের দুটি বালু চরের মধ্যবর্তি জলমহালে আড়াআড়িভাবে সারি সারি বাশঁ পুতে বাঁধ নির্মান করা হয়েছে। পদ্মা নদীর দু’টি চরের মধ্যবর্তি প্রায় এক কি.মি. জলমহল এলাকা জুড়ে বাঁশের বেড়ার পানির নিচের অংশের গায়ে জাল দিয়ে ঘিরে রেখে ক’য়েকশো মিটার পর পর রাক্ষুসী জালের ফাঁদ তৈরী করে রাখা হয়েছে বলেও জানা যায়। ফলে পদ্মা নদীর উক্ত জলমহল এলাকার সব ধরনের জাটকা ইলিশ চলাচল করতে না পেরে ঘুরে ফিরে আটকা পড়ছে বাঁশের বেড়ার ফাঁদ জালে। শুধু তাই নয়, ইলিশ ছাড়াও পদ্মা নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আটকা পড়ছে উক্ত বাঁধের ফাঁদ জালে। কয়েক ঘন্টা পর পর অসাধু জেলেরা বাঁধের মাছ ধরে বিক্রি করছে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে। এতে উপজেলা পদ্মা নদীতে অবাধে নীধন হচ্ছে জাটকা ইলিশ সহ বিভিন্ন প্রজাতীর মৎস্য সম্পদ। বুধবার উক্ত বাঁধের এক মালিক হিটু মৃধা (৫০) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, “ অনেক টাকা খরচ করে মাত্র কয়েকদিন ধরে বাঁধ দিয়েছি। বাঁধে এখনো পর্যাপ্ত মাছ আসে নাই। শুধু জেলেদের খাওয়া খরচ চলছে। পদ্মা নদীতে এ বাঁধ নির্মানের সাথে এলাকার আরও দু’একজন প্রভাবশালীরা জড়িত আছেন বলে তিনি জানান”। উক্ত বাঁধ এলাকার পাশের এক বসতি আঃ সালাম ফকিরের ছেলে ফয়সাল ফকির (৩৫) জানায়,“ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর ছত্র ছায়ায় পদ্মা পারে কলা বাগানের আড়ালে নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে দিনরাত জাটকা ইলিশ নীধন করা হচ্ছে। উপজেলার ইলিশ সম্পদের ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলেও প্রশাসন কেন যে না দেখার ভান করে চলেছে তা আমরা বুঝতে পারছি না”। বাঁধ এলাকার পাশের গ্রাম আঃ গফুর মৃধা ডাঙ্গী গ্রামের জেলে বিল্লাল ফকির (৩৮) জানায়,“ পদ্মা নদীতে মাছ ধরে আমি ছয় সদস্যের পরিবার চালাই। কিন্ত দুই সপ্তাহ ধরে নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়ার ফলে আমাদের জালে আর আগের মত মাছ পড়ছে না। তাই ক’য়েক দিন ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করতেছি”। আরেক জেলে বালিয়া ডাঙ্গী গ্রমের খোকা মন্ডল (৫২) জানায়, “এই শুকনা কালে পদ্মা নদীতে ইলিশ চলাচলের মূল স্রোত ধারায় বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে পদ্মায় মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় উপজেলার বেশীরভাগ জেলে পরিবারের আয় উপার্জন করে গেছে”। একই সময় জেলে সোহরাব বেপারী (৫৫) বলেন, “ পদ্মায় আড়াআড়ি বাধঁ দেওয়ার কারনে উপজেলার মোট সাড়ে সাতশত জেলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তার মধ্যে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের পদ্মা পারের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক জেলের উপার্জন একবারেই বন্ধ হয়ে গেছে”। আর উপজেলা মৎস্য অফিসার নাঈদ হাসান বিপ্লব বলেন, “আমার নতুন পোষ্টিং হয়েছে। আমি পদ্মা নদীতে একটি আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া খবর পেয়ে সরেজমিনে লোক পাঠিয়েছি। বাঁধটির এক অংশ নাকি সদরপুর উপজেলা ও অন্য অংশ নাকি চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীর জল সীমানায় পড়েছে। কিন্তু সদরপুর উপজেলা প্রশাসন বাঁধটি অপসারনে সহায়তা করতে রাজি হচ্ছে না। তাই উর্দ্ধতনদের সাথে আলোচনা স্বাপেক্ষ যৌথভাবে ব্যাবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি”। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ফয়সল বিন করিম জানান,“পদ্মা নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া হলে শীগ্রই তা অপসারনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে”। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামের পদ্মা পারে কলাবাগান এলাকায় নদী পার হতে সারি সারি বাঁশ পুতে প্রায় অর্ধেক পদ্মা জুড়ে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মান করা হয়েছে। পদ্মা নদীতে উক্ত বাঁশের বেড়ার পানির নিচের অংশে বাঁশের গায়ে ঘন জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এভাবে বাঁশ জাল দিয়ে জলাশয়ে মাছ চলাচলের পথ বন্ধ করে বাঁধের কয়েক মিটার পর পর তৈরী করে রাখা হয়েছে জাটকা ও ইলিশ আটকের ফাঁদ। আর উক্ত বাঁধের জেলেরা দু’ঘন্টা অন্তর অন্তর বাঁধের ফাঁদে পড়া জাটকা ও ইলিশ তুলে এনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে চলেছে। এতে দিনরাত নীধন হচ্ছে উপজেলার ইলিশ প্রজাতী।

উক্ত বাঁধ এলাকার এক জেলে আলামিন ফকির (৪০) জানায়, এ বছর পদ্মায় বড় ইলিশ খুবই কম। তবে প্রতিদিন বাঁধে মনে মন জাটকা ইলিশ মারা পড়ছে বলে সে জানায়”।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION