ইউক্রেনের চিকিৎসাকেন্দ্র এবং আরও বেশ কিছু স্থাপণায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে এসব হামলা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনিয়েহুবোভ টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে লিখেছেন, রাশিয়ার আটটি ড্রোন শহরের তিন জেলায় বেসামরিক এলাকায় আঘাত হেনেছে। গত তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ওই এলাকায় এর আগেও বেশ কয়েকবার হামলা চালানো হয়েছে। সিনিয়েহুবোভ জানিয়েছেন, রাশিয়ার হামলায় পাঁচজন আহত হয়েছে। তবে মেয়র ইহোর তেরেখোভ জানিয়েছেন কমপক্ষে সাতজন এসব হামলায় আহত হয়েছে। সিনিয়েহুবোভ জানিয়েছেন, ড্রোন হামলার পর আগুন ধরে যাওয়ায় ৫০ জনকে চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং জরুরি কর্মীরা সেখানে কাজ করছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। সেখানকার কয়েক ডজন বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বেশ কিছু অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের জানালা ভেঙে পড়েছে বলেও জানানো হয়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে ইউক্রেনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যুদ্ধরত ইউক্রেনের অর্থনীতি পুনর্গঠনে আনুমানিক ৫২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দরকার। এই অর্থ দেশটির ২০২৪ সালের প্রত্যাশিত মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের প্রায় তিনগুণ। বিশ্ব ব্যাংক, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় কমিশন এবং ইউক্রেন সরকারের এক যৌথ সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সমীক্ষায় ২০২১ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত বছরের ৪৮৬ বিলিয়ন ডলারের অনুমানের তুলনায় এবারের খরচ সাত শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবাসন, পরিবহন, জ্বালানি, বাণিজ্য ও শিক্ষা খাত।
দীর্ঘমেয়াদে আবাসন খাতের ক্ষতি পূরণে দরকার প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলার, পরিবহন খাতে ৭৮ বিলিয়ন ডলার, জ্বালানি ও খনি খাতে ৬৮ বিলিয়ন ডলার, বাণিজ্য ও শিল্প খাতে ৬৪ বিলিয়ন ডলার এবং কৃষি খাতে দরকার ৫৫ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু ধ্বংসাবশেষ অপসারণ এবং ব্যবস্থাপনার পেছনেই ১৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হতে পারে।
বিশ্ব ব্যাংকের ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের সহ-সভাপতি আন্তোনেলা বাসানি বলেছেন, এই মূল্যায়ন ইউক্রেনের অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। ইউক্রেন সরকার ২০২৫ সালের জন্য ৭ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রেখেছে, যেখানে দাতাদেরও সহায়তা থাকবে। তবে এখনো প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়েছে বলে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের সরাসরি ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে ১৭৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১৫২ বিলিয়ন ডলার।
Leave a Reply