নিজস্ব প্রতিবেদক:-
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির পদযাত্রাকে ঘিরে দফায়-দফায় সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় নতুন আরও একটি মামলা করেছে পুলিশ।
কারাগারে হামলার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানায় এই মামলাটি হয়।
একই রাতে টুঙ্গিপাড়া থানায় মামলা আরও একটি মামলা হয়েছে।
এ নিয়ে এ ঘটনায় চারটি হত্যাসহ মোট ১০টি মামলা হয়েছে।
এসব মামলায় মোট নয় হাজার ৮৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর এ পর্যন্ত মোট ৩১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে জেলার তানিয়া জামান বাদী হয়ে নতুন এই মামলাটি করেন বলে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান জানান।
এ মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৬০ জনের নাম বলা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত ৯০০ থেকে এক হাজার নেতাকার্মীকে আসামি করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দাঙ্গা সৃষ্টির করার জন্য জেলা করাগারে এ হামলা করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুন্সি আতিয়ার রহমান, গোপালগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম এম নাসির অহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এম জুলকদর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা এস এম মুনির হিটলার, সাবেক জিপি দেলোয়ার হোসেন সরদার, মো. রবিউল আলম, জয়ন্ত কুমার চক্রবর্তী, এম সাদিত বিপ্লব, কলিমুল্লাহ, আশিক জামান উপল, এম এম আবুল কালাম আজাদ, মো. এনামুল হক ডাবলু, ইকবাল হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলীমুজ্জামান বিটু, মুকসুদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম শিমুল, কাউন্সিলর জোবায়ের রহমান ঝন্টু, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমীর হামজা, কাশিয়ানী সদর ইউপি চেয়ারম্যান খোকন সিকদার, কাশিয়ানী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আমিন ওরফে তুহিন কাজী, ওড়াকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদরুল আলম বিটুল।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে এনসিপির পদযাত্রা সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা হন। তাদের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। লাঠিসোঁটা, ঢাল, বল্লম, লোহার রড, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, ছেনদা, হাতুড়ি, ট্যাটা, চাকু, ছুরিসহ মারাত্মক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে লোকজন জেলা কারাগারের ফটকে আসে। পরে তারা জেলা কারাগারে হামলা করে।
প্রথম গেইট ভেঙে কারগারের প্রধান ফটকে চলে আসে। তারা স্যালুটিং ডায়েস, কারা ক্যান্টিন, বন্দিদের সাক্ষাৎ কক্ষ ভাঙচুর করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। কারারক্ষী রাজন মাতুব্বর বাধা দিলে আসামিরা তাকে মারপিট করে গুরুতর আহত করে।
এক পর্যায়ে আসামিরা ফটকের মূল গেইট ও অস্ত্রাগার ভাঙার চেষ্টা করে। জেলখানায় ঢুকে তারা বন্দিদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। পিকআপ ও কারগারের স্থাপনা ভাঙচুর করে। একটি স্কুটি, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। আত্মারক্ষার্থে ১৯টি ফাঁকা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়।
একই রাতে টুঙ্গিপাড়ায় ছাত্রলীগের-যুবলীগের ২৮২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছে পুলিশ।
এনসিপির সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করতে টুঙ্গিপাড়ায় মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে ৮২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে বলে টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি খোরশেদ আলম।
টুঙ্গিপাড়া থানার এসআই মনির হোসেন বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এ মামলাটি করেন।
বাকি আট মামলা তথ্য
১৬ জুলাই এনসিপির উপর দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মোট পাঁচজন নিহত হয়।
১৯ জুলাই রাতে নিহত চারজনের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সদর থানায় চারটি হত্যা মামলা করে। এই চারটি হত্যা মামলায় অজ্ঞাত প্রায় পাঁচ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করা হয়।
এ ছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দুটি, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি করে মামলা করে পুলিশ। এই চার মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুই হাজার ৬৫০ জনকে আসামির তালিকায় রাখা হয়।
এ ঘটনায় ১১ জনকে নতুন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোট ৩১২ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
Leave a Reply