আনোয়ার জাহিদ, আলফাডাঙ্গা থেকে ফিরে
আলফাডাঙ্গায় বিনা টেন্ডারে সরকারি কাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবালের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, এসব কাজ দেওয়া হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এক নেতার হাতে, যিনি ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনে চলছে তীব্র আলোচনা ও ক্ষোভ।
নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাই সরকারের ছত্রচ্ছায়ায়!
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারায় আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ঘরানার সকল সহযোগী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
তবে অভিযোগ রয়েছে, আলফাডাঙ্গায় সেই নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা নাঈম ফকিরকে উপজেলা প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইউএনও রাসেল ইকবালের প্রত্যক্ষ নির্দেশনাতেই এই কাজগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কোটি টাকার কাজ, নেই টেন্ডার!
উপজেলা অফিস সূত্র জানায়, আরসিসি রাস্তা, ইউএনও কোয়ার্টারের ওয়াকওয়ে, শিল্পকলা একাডেমি সংস্কার, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল উন্নয়ন ও পুকুরঘাট নির্মাণসহ প্রায় কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে 00002 পদ্ধতিতে, যা মূলত ১০ লাখ টাকার নিচের প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত।
একটি প্রকল্পে ২০ লাখ টাকার আরসিসি রাস্তা দেখানো হয়েছে দুই ভাগে বিভক্ত করে প্রতিটিতে ১০ লাখ টাকা দেখিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই বিভাজন সরাসরি সরকারি ক্রয় নীতিমালার লঙ্ঘন।
প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন নাম, মালিক এক!
প্রকল্প বাস্তবায়নে নামমাত্র প্রতিযোগিতার দেখানো হয় স্নেহা এন্টারপ্রাইজ, শিমুল এন্টারপ্রাইজ ও ওলি এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসবের কাজ করছে একই ব্যক্তি-নাঈম ফকির।
শিমুল এন্টারপ্রাইজের মালিক সাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, “আমি কোনো কাজ করিনি, শুধু লাইসেন্স দিয়েছি। সব কাজ করছে নাঈম ফকির।”
মাঠ পর্যায়ের শ্রমিকরাও স্বীকার করেছেন, এরপর পৃষ্ঠা ৩, কলাম ১
কাজের তদারকি ও নির্দেশনা দিচ্ছেন নাঈম ফকিরই। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ক্ষোভ
একজন ইউপি চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা জানিই না কোথায় কী কাজ হচ্ছে। কোনো সভা, কোনো সিদ্ধান্ত হয় না। ইউএনও এককভাবে সব প্রকল্প বিলি করছেন।”
সরকারি অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ নেতার উপস্থিতি
২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল আলফাডাঙ্গা ঈদগাহে মিনার নির্মাণ উদ্বোধনে ইউএনও রাসেল ইকবালের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একে এম আহাদুল হাসান। যেখানে আওয়ামী লীগের নাম উচ্চারণ করাও ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে একজন নিষিদ্ধ দলের নেতার সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিতি প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
আলফাডাঙ্গা পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বাশারুল বারী বলেন, “ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ এটা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। অথচ সেই সংগঠনের নেতাকে সরকারি কাজ দিয়ে পুনর্বাসন করা হচ্ছে! ইউএনও এখন যেন সাবেক নেতাদের সুবিধা আদায়ের কর্মচারী হয়ে গেছেন।”
ইউএনও’র প্রতিক্রিয়া-
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও রাসেল ইকবাল প্রথমে বলেন, “লিখিত অভিযোগ দিন।”
অবশ্য তবে পরে নিজেই সাংবাদিকদের ফোন করে জানান, “আমি নতুন এসেছি। কে কোন দলের তা জানতাম না। পরে জানার পর নাঈমকে আর কোনো কাজ দেইনি। আর কাজগুলো আরএফকিউ পদ্ধতিতে দেওয়া হয়েছে এটা সরকারের অনুমোদিত পদ্ধতি।”
তবে প্রশাসনের ভেতরের একাধিক সূত্র জানায়, কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে ঠিকাদারের পরিচয় ও যোগ্যতা যাচাই করা ইউএনও’র দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায় এবং আরএফকিউ সীমার বাইরে গিয়ে প্রকল্প ভাগ করায় ইউএনও’র যুক্তি আইনি ভিত্তি হারাচ্ছে।
Leave a Reply