বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন

চিরিরবন্দরে জনতা ব্যাংকে দুর্নীতি ও অনিয়ম: ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা

  • Update Time : শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫, ৯.৩৪ এএম
  • ৭২ জন সংবাদটি পড়েছেন

খান মোঃ আঃ মজিদ, দিনাজপুর

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে দুইজন কর্মকর্তার যোগসাজশে জনতা ব্যাংকে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে একজন গ্রাহক অভিযোগ দায়ের করলে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন পুর্বক তদন্ত করলে এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন না পাঠানোয় ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এক গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব, অন্য একজনের আইডি কার্ড, মোবাইল নম্বর, ছবি ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে হিসাবধারী দিনাজপুর এরিয়া অফিসের ডিজিএম বরাবর অভিযোগ দায়ের করলেও অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২০২০ সালে জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মোঃ সিদ্দিক নামে জনৈক ব্যাক্তি ৫০০ টাকা দিয়ে চিরিরবন্দর জনতা ব্যাংকে একটি হিসাব খোলার পর ব্যাংক সার্ভিস চার্জ কাটতে কাটতে হিসাবে টাকা শুন্য হলে হিসাবটি ব্যাংক বন্ধ করে দেয়। এরপর গত ২০২৪ সালের ১২ জুন প্রগেসিভ বীমা হতে ৩১ হাজার ১ শত ৯৭ টাকার একটি চেক ওই গ্রাহকের নামে আসলে গত ২০২৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের দুইজন কর্মকর্তার যোগসাজশে একটি চক্র আসল গ্রাহক মোঃ সিদ্দিক এর বীমার চেকটি তাকে না দিয়ে উপজেলার আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের বেকীপুল বাজারের জনৈক সিদ্দিক আলীকে ধরে নিয়ে এসে জাল স্বাক্ষর করে চেক জমা করে। হিসাবটি বন্ধ থাকায় বেকীপুলের নকল সিদ্দিক আলীর জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, মোবাইল নং নিয়ে হিসাবটি চালু করা হয় এবং একই দিনে সিনিয়র অফিসার চেক ইস্যুকারী কর্মকর্তা মাসুমা খাতুন একটি লুস চেকের পাতা ইস্যু করলে হিসাবের স্বাক্ষর, ছবি, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র না মিললেও ক্যাশ অফিসার প্রশান্ত কুমার রায় ঐ লুস চেকের পাতার পিছনে একে একে সাত সাতটি স্বাক্ষর করিয়ে নেন ওইদিনেই স্বাক্ষর না মিলেও টাকা দিয়ে দেন। এরপর মূল গ্রাহক মোঃ ছিদ্দিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বরাবরে টাকা চেয়ে আবেদন করলে ব্যবস্থাপক ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা রিফাত হোসেনকে ওই নকল সিদ্দিকের খোঁজে পাঠায়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে নকল সিদ্দিক টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তা বলেন, কোন গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া হিসাবের ছবি পরিবর্তন, স্বাক্ষর পরিবর্তন, জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করার সুযোগ নাই। একটি চক্র যোগসাজশ করে স্বাক্ষর ও ছবি না মিললেও, নতুন করে পরিচয়পত্র, ছবি ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করে ব্যাংকের সাথে প্রতারণা করেছে। এধরনের কাজে ব্যাংকের সুনাম ক্ষুন্ন হয়। আমরা সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে নিজেরা চাঁদা দিয়ে ওই গ্রাহকের টাকা দিয়েছি। এভাবে তো ব্যাংক চলতে পারেনা। এখন পর্যন্ত যোগসাজশকারী কর্মকর্তাদ্বয়ের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। দোষ করলো দুইজন, চাঁদা দিতে হলো সবাইকে।

এ ব্যাপারে আসল গ্রাহক মোঃ সিদ্দিক বলেন, ব্যাংকে কয়েকবার গেলেও ব্যাংক কতৃপক্ষ তাকে বলেন, টাকা উঠাইয়া নিয়ে গেছেন। তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেন “ভাই আমি কোনদিন ব্যাংকে আসিও নাই, টাকাও তুলি নাই। হামার এলাকার ডলার ভাই আছিলো, এইজন্য মুই চিরিরবন্দর এ্যাকাউন্ট খোলাইছু। এ কথা বলার পর তাকে অপদস্ত করে ব্যাংক থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর আমি দিনাজপুর এরিয়া অফিসের ডিজিএম বরাবরে অভিযোগ দেই। তারপর ব্যাংকের ম্যানেজার সকলের কাছে চাঁদা তুলে আমার ৩১ হাজার ১ শত ৯৭ টাকার স্থলে ঈদের আগের দিন আমাকে ৩০ হাজার ৫ শত টাকা টাকা দেয়। এরপর ব্যাংক কতৃপক্ষ আমাকে বলেন, ওই কর্মকর্তাদ্বয়ের চাকুরী চলে যাবে, একথা বলে তদন্তকারী দলের কাছে আমাকে বলতে বলে, এ অভিযোগ আমি দেইনি, বলতে বলায় আমি সেটাই বলেছি।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জিয়াউল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বক্তব্য না দিয়ে আলোচনায় বলেন, এ ব্যাপারে ৫ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করার পর তদন্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত চুড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি, তবে অভিযোগকারী তদন্তকারী দলকে বলেছেন, উক্ত অভিযোগ তিনি করেননি। ওই দুই কর্মকর্তার একজন বদলী হয়ে অন্যত্র গেছে, আরেকজন কর্মরত আছে।

দিনাজপুর এরিয়া অফিসের ডিজিএম সাজ্জাদ হোসেনের কাছে জানতে মুঠোফোনে কয়েকবার কল করার পর রিসিভি না করায় হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ দিয়েও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রংপুর বিভাগের জিএম বারেক চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা অঞ্চল প্রধানকে বিষয়টি তদন্ত করতে চিঠি দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন এখনও অত্রাফিসে আসেনি। কি প্রতিবেদন দেয়, সে আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

jmitsolution_16012
© All rights reserved © 2025
Developed By : JM IT SOLUTION