এম. এম. রহমান, ফরিদপুর
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এমন এক সন্ধিক্ষণে, যেখানে ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত ‘নৌকা’য় যাত্রী তোলার নামে চলেছে এক ধরনের আদর্শহীন, দায়হীন যাত্রীবোঝাই প্রতিযোগিতা। কে আসছে, কার অতীত কী, আদর্শ আছে কি না-এসব দেখার বালাই ছিল না।
নৌকা হয়ে উঠেছিল সুবিধাভোগীদের জন্য এক ভাসমান হাট, যেখানে পদ ও প্রভাব কিনে নেওয়া যেত কেবল ‘তোষামোদির বিনিময়ে’। ফলে যা হওয়ার, তাই হলো-নৌকার পেট ভারে দেবে যেতে শুরু করল।
অনেকে তখন বলেছিল, “নৌকায় ফাটল ধরেছে,” কিন্তু কিছু নেতা বলেছিলেন, “জল ঢুকছে মানে বাম্পার ফলন আসছে!”
বাস্তবতা হলো, ৫ আগস্টের পর স্পষ্ট হয়ে যায়, নৌকা আর ভেসে নেই-সে ডুবে গেছে অতল গহ্বরে। আর এই ডুবের সঙ্গেই নেতৃত্বও ডুবে যায়।
বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় নেতা এখন দেশের বাইরে কিংবা আত্মগোপনে। কর্মীরা রাস্তায়, সংগঠন ছন্নছাড়া, অথচ নেতৃত্ব নেই-জবাবদিহিতার বালাইও নেই।
এই ভরাডুবি কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নয়-এটা হলো বছরের পর বছর ধরে চলা দুর্নীতি, তোষামোদ আর চরিত্রবর্জিত রাজনীতির ধারাবাহিক পরিণতি।
ধানের শীষের সামনে শিক্ষা :
নৌকার ভরাডুবি এখন সাধারণ মানুষের কাছে এক প্রকাশ্য রাজনৈতিক শিক্ষা।
অনেকেই পরিবর্তনের প্রত্যাশায় তাকিয়ে আছেন ধানের শীষ-এর দিকে-একটি বিকল্পের ও সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু এখানেও দেখা যাচ্ছে হুরমুর করে ভিড় জমানো-যার মধ্যে অনেকেই অতীতে ছিলেন বিতর্কিত, দুশ্চরিত্র কিংবা দুর্নীতিপরায়ণ।
এটাই এখন বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় সতর্কবার্তা।
নৌকার ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে, যদি তারাও দলে ফেরায় আদর্শহীন, ক্ষমতালিপ্সু, দুর্নীতিপরায়ণ অনুপ্রবেশকারীদের তবে ধানের শীষও একদিন আগাছায় ঢাকা পড়ে যাবে।
ধানের জমি সবুজ দেখাতে গিয়ে যদি আগাছা দিয়ে ভরে ফেলা হয়, তবে পরিণতি হবে ভয়াবহ-ধান ফলার তো প্রশ্নই ওঠে না, বরং প্রকৃত ধান গাছ খুঁজতে মাইক্রোস্কোপ লাগবে।
বিএনপিকে বুঝতে হবে-শুধু আওয়ামী লীগ নয়, জনগণ এখন যেকোনো দলের প্রতি বিচার করছে।
যে দল সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে চায়, তাকে অবশ্যই:
চরিত্রের প্রশ্নে কঠোর হতে হবে,
নেতৃত্বে রাখতে হবে নৈতিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা,
কৃতকর্মে কলঙ্কিতদের ফেরানোর আগে দশবার ভাবতে হবে।
নৌকা তো ডুবেছে-সেটা কেউ আর বাঁচাতে পারবে না।
এখন প্রশ্ন হলো-ধানের শীষকে কি আগাছামুক্ত রাখা যাবে?
নইলে বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত একদিন সত্যিই হয়ে উঠবে আগাছায় ভরা এক বর্গাকারে- যেখানে আদর্শ হারাবে, আর দল হারাবে মানুষের আস্থা।
Leave a Reply