মো. মাহবুবুর রহমান
বাজারে বর্ষাকালের আগমনে যেসব মৌসুমি ফল নজর কাড়ে, তার মধ্যে জাম অন্যতম। রঙে গাঢ় বেগুনি, স্বাদে টক-মিষ্টি আর গুণে পরিপূর্ণ এই ফলটি শুধু জিভের তৃপ্তি নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য টনিক বলেই বিবেচিত। বহু আগে থেকেই আয়ুর্বেদ ও লোকজ চিকিৎসায় জাম ফল, পাতা, বীজ এবং ছাল ব্যবহার হয়ে আসছে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে।
জামের পুষ্টিগুণ:
জামে রয়েছে-
ভিটামিন সি, এ, এবং বি কমপ্লেক্স
ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভনয়েড ও পলিফেনল
এই উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
স্বাস্থ্যের জন্য জামের উপকারিতা:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:
জাম বীজে আছে জ্যাম্বলিন ও জ্যাম্বোসিন, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ ফল।
হজমে সহায়ক:
জামে থাকা ট্যানিন ও আঁশ হজমের সমস্যা কমায় এবং গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির বিরুদ্ধে কাজ করে।
রক্ত শুদ্ধিকরণ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ:
জাম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রক্ত পরিষ্কার করে এবং এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) হ্রাসে সহায়তা করে।
ত্বক ও চুলের যত্নে:
জামে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল রাখে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
লিভার ও হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী:
জাম লিভার পরিষ্কারে সহায়তা করে ও হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা দেয়। এতে ট্রাইগ্লিসারাইডও কমে।
জাম পাতার গুণাগুণ:
জামের পাতা দাঁতের মাড়ি শক্ত করতে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ব্যবহৃত হয়। পাতার রস রক্তচাপ ও ডায়রিয়ার চিকিৎসায় উপকারী।
সতর্কতা:
অতিরিক্ত জাম খেলে হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য
খালি পেটে বেশি খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে
ডায়াবেটিস রোগীরা বীজজাত ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
জাম কেবল একটি মৌসুমি ফল নয়-এটি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তি ও সামগ্রিক সুস্থতার একটি প্রাকৃতিক সহচর। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের খাদ্যতালিকায় জাম নিয়মিত রাখলে উপকারিতা মিলবে শরীরের ভেতর ও বাইরে। তাই বলা যায়-জাম শুধু ফল নয়, এটি প্রকৃতির পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে আমাদের জন্য একটি ভেষজ আশীর্বাদ।
প্রস্তুতকারক : মো. মাহবুবুর রহমান
সহ. অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ
ফরিদপুর সিটি কলেজ
Leave a Reply