নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে চলমান গুঞ্জনের প্রেক্ষাপটে গতকাল শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভা শেষে এক অনির্ধারিত উপদেষ্টা বৈঠকে সরকারের তিনটি মূল দায়িত্ব ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে অংশগ্রহণকারী উপদেষ্টারা নির্বাচন, বিচার ব্যবস্থা ও কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় করেন। তারা বলেন, সরকারের দায়িত্ব পালনের পথে ষড়যন্ত্রমূলক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে সরকার জনগণকে সম্পৃক্ত করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্বাচন প্রক্রিয়া :
সভায় উপদেষ্টারা চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, দলগুলোর ‘অযৌক্তিক’ দাবি এবং এখতিয়ার বহির্ভূত আচরণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সংযত ও দায়িত্বশীল ভূমিকা অপরিহার্য। সহিংসতা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।
বিচার ব্যবস্থা :
বৈঠকে বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতা রক্ষায় সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করা হয়। দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার রূপ দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রবণতার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয়ার কথা বলা হয়। উপদেষ্টারা জানান, দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার আপসহীন থাকবে।
কাঠামোগত সংস্কার :
অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক খাতে প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের পথে গোষ্ঠীস্বার্থে সংঘটিত প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা হয়। উপদেষ্টারা জানান, এই সংস্কারগুলো দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যক। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আন্দোলন ও অপপ্রচার চলতে থাকলে তা প্রতিহত করতে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রসর হবে।
জনগণের প্রত্যাশা ও প্রতিশ্রুতি :
বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে গণমানুষের প্রত্যাশার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তা পূরণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শত প্রতিকূলতা ও রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও সরকার তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ভবিষ্যতে যদি সুনির্দিষ্ট বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে সরকার আর নীরব থাকবে না—জনগণকে সম্পৃক্ত করে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।
বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান:
উপদেষ্টা পরিষদের অভিমত, জাতীয় স্থিতিশীলতা ও শান্তি নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ এবং বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি। সরকার শিগগিরই রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত শোনার উদ্যোগ নেবে এবং রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি তাদের সামনে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবে।
Leave a Reply