কাজী আফতাব হোসেন, নগরকান্দা
বিএনপির সাবেক মহাসচিব, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী আজ । ১৯৪০ সালের ৫ মে তিনি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম কে এম আতিকুর রহমান এবং মাতা মরহুমা রাবেয়া রহমান।
কে এম ওবায়দুর রহমান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় একবার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুইবার সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসুর) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে তিনি আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ছয় দফা আন্দোলনের সমর্থন করেন এবং ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। তিনি ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৬৬ থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। অসহযোগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ফরিদপুর জেলা সমন্বয়ক ও প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক হিসেবে তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ফরিদপুরের যুব সমাজকে সংগঠিত করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরে তিনি ভারতে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের পুরুলিয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পলিটিকাল মোটিভেটর এবং পরে কলকাতা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তখন তিনি আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩-১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও তার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)তে যোগ দেন এবং ১৯৬৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচিত হন।
এ সময় তিনি প্রথমে মৎস্য পশুপালন পরে বিমান পর্যটন প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ -১৯৮৮ সালে তিনি বিএনপির মহাসচিব ছিলেন। এরপর এরশাদের সামরিক সরকারের চাপে নির্বাচনী পথিক হিসেবে চাকা নিয়ে জনতা দল গঠন করেন। খালেদা সরকার ক্ষমতা আসার পর আবারো যোগদান করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে। জুন ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচনে বিএনপি থেকে ফরিদপুর-২ আসলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আমৃত্যু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
তিনি ১৯৬৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১০ বছরের অধিককাল কারাবরন করেন। ২১ মার্চ ২০০৭ সালে ৬৬ বছর বয়সে তিনি তিনি ঢাকার এপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কে এম ওবায়দুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কে এম ওবায়দুর রহমান স্মৃতি পরিষদ, নগরকান্দা-সালথা উপজেলা বিএনপি, কে এম ওবায়দুর রহমান স্মৃতি সমাজকল্যাণ পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মরহুমের মাজারে পুষ্প মাল্য অর্পণ ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা। এ অনুষ্ঠানে তার একমাত্র কন্যা শামা ওবায়েদ ইসলাম রিঙ্কু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
Leave a Reply