নিজস্ব প্রতিবেদক, নগরকান্দা
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন অনিয়ম, অবহেলা ও কর্তৃপক্ষের সেচ্ছাচারিতা নিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে একাধিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার তথ্য উঠে আসে সংবাদকর্মীদের হাতে। দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনায় দিন দিন ক্ষোভ দানা বাঁধছে সাধারণ জনগণের মধ্যে।
গত ১৫ এপ্রিল ‘ নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়ম’ নিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়লেও সন্তোষজনক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। তবে সংবাদ প্রকাশের পর অভিযুক্ত চিকিৎসকদের অফিস টাইমে হাসপাতালের বাইরের চেম্বার করতে দেখা না গেলেও থামেনি স্বাস্থ্য সহকারীরা। দু’জন নারী ও দু’জন পুরুষসহ মোট চারজন স্বাস্থ্য সহকারী থাকলেও তাদের কর্মতৎপরতা প্রশ্নবিদ্ধ।
দীর্ঘদিনের
স্থানীয় সিন্টিকেট ভাঙতে, স্বাস্থ্য সহকারী ও বিভিন্ন পদে কর্মরত স্টাফদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কতোটা সক্ষম হবেন তা দেখার অপেক্ষায় এলাকাবাসী।
সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায় সুজাতা নামক এক বাবুর্চি স্বাস্থ্য সহকারীর ভূমিকায় জরুরী বিভাগে ইনজেকশন, কাটাছেঁড়া সেলাইসহ রোগীর বিভিন্ন সেবা দিচ্ছে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় চিকিৎসাসেবা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে জনমনে।
অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জাবাবে স্বাস্থ্য সহকারী আনন্দ চন্দ্র সাহা বলেন, আমি কথা দিচ্ছি অফিস টাইমে আর চেম্বারে রোগী দেখবো না এবং কর্তৃপক্ষের রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবো। তবে রোস্টার করার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আরোও সচেতনতা প্রত্যাশা করেন তিনি। তিনি আরোও বলেন, নারী স্বাস্থ্য সহকারীরা নাইট ডিউটিকালে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। একজন নাইট গার্ড রাখার বিষয়ে কর্তৃপক্ষে জানালেও তা আমলে আসেনি।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের পর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন সময় মতোই অফিসে আসছে চিকিৎসক ও স্টাফরা। তবে এ পরিবর্তন কতোদিন টেকসই হবে তা নিয়েও নানা প্রশ্ন জনমনে।
এদিকে এমন অব্যবস্থাপনার জন্য জনবল সংকটকে দায়ী করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জনবল সংকটের বিষয়টি সত্য হলেও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনাও ত্রুটিপূর্ণ বলে প্রতিয়মান হয়েছে।
এছাড়াও দীর্ঘদিন অফিস না করে বেতন তোলার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত আয়া আরিফা আক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জয়দেব কুমার সরকার বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ভালো চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করণে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সব অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আয়া আরিফা আক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। তিনি কি উত্তর দেন তা দেখে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, আপনাদের সংবাদ প্রকাশের পর সব অনিয়মগুলো আমার নজরে এসেছে। আমি এবিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে এক কর্মচারী আরিফা আক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে নির্দেশ দিয়েছি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে।
সিভিল সার্জন আরোও বলেন, হাইকোর্টের রায় অমান্য করে কোন স্বাস্থ্য সহকারী নামের পূর্বে ডা. লিখলে তার বিরুদ্ধে ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply